পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আচমকা জাতির উদ্দেশে ভাষণে তখনকার ১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিল করার কথা ঘোষণা করার সময় বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি এবং কালো টাকার চক্রকে ভেঙে দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। একইসঙ্গে জাল টাকা এবং জঙ্গিদের তা ব্যবহার করা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে’। ৫ বছর পর দেখা যাচ্ছে দুর্নীতি এবং কালো টাকার চক্র ভাঙার বদলে বড় মৌচাকে পরিণত হয়েছে। জাল টাকা বহাল তবিয়তে বাজারে আসছে। আর ৫ বছর আগেই নতুন ২০০০ টাকার নোট সাধারণের হাতে আসার আগেই তা কাশ্মীরের জঙ্গিদের হাতে চলে গিয়েছিল। একথা সকলেরই মনে রয়েছে।
সেদিন প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ‘ইমানদারি কা উৎসব’ এর শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিলের ফলে বোঝা যাবে কত জাল টাকা বাজারে রয়েছে। পরে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৯৯ শতাংশ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট রির্জাভ ব্যাঙ্কে ফিরে আসে। এর অর্থ কোনও কালো টাকাই ফেরেনি। বাকি ১ শতাংশ নোট নেপাল সরকার, জেলা সমবায় ব্যাঙ্কগুলির কাছে রয়ে গিয়েছে। কারণ পরে কেন্দ্র ওদের থেকে পুরনো নোট আর ফেরত নেয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরে বেশি টাকা মজুদ করার প্রবণতাও কিছুটা কমেছে। কারণ এই সরকার ফের কবে ২০০০ টাকার নোট বাতিল করে দেবে, এই ভয় রয়ে গিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আসলে কিন্তু তা হয়নি। বা সেই সুফল সামান্য। বরং ভারতের মতো দেশ, যেখানে ৯৫ শতাংশের বেশি ব্যবসা নগদ টাকায় পরিচালিত হয়, সেই ব্যবসা কুপোকাত হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় কোটি জনের কর্মসংস্থানের দফারফা হয়েছে।
সমগ্র ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে, যার আজও রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে। অতিমারি এর উপর গোদের উপর বিষফোড়ার কাজ করে আরও সঙ্গীন হাল করেছে ভারতের অর্থনীতির। তাই পেট্রোল–ডিজেল–রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরকার চালানোর টাকা জোগাড় করতে হচ্ছে।নোটবন্দি এবং অতিমারি মিলিয়ে দেশের জিডিপির হার অনেকটাই নামিয়ে দিয়েছে।
নোটবন্দির আর যে বড় উদ্দেশ্য তখনকার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বারবার প্রচার করেছিলেন, তা হল দেশের মুদ্রা ব্যবস্থার ডিজিটাইলেজেশন। ডিজিটাল টাকা বের করার কথাও বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এর ফলে দেশের মানুষের নগদ টাকা ব্যবহারের অভ্যাস কমবে। পুরো লেনদেন ব্যাংক মারফত হলে আয়কর দফতরের নজরে থাকবে তা এবং কর আদায়ও বাড়বে। কিন্তু দেখা গেল, নোটবন্দির পর বাধ্য হয়ে দোকানিরা ডিজিটাল লেনদেন কিছুকাল করার পর ধীরে ধীরে ফের গোটা দেশই নগদ অর্থনীতিতে ফিরে গিয়েছে। এর থেকে প্রমাণ হয়, এই সম্পর্কে সরকারের ধারণা ছিল নিছকই আকাশ–কুসুম। সরকারও হাল বুঝে অআর ডিজিটালে লেনদেনের কথা বলে না।
নোটবন্দি হওয়ার পরও এই মূহূর্তে দেশে ৫ লক্ষ কোটি টাকার মতো কালো টাকা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এত থেকে স্পষ্ট, নোটবন্দি প্রধানমন্ত্রীর দাবিমতো কালো টাকা বাজার থেকে কমাতে পারেনি। তারপর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজার থেকে ১০০০ টাকার নোট তুলে নিয়ে ২০০০ টাকার নোট ছেড়ে এখন নিজেরাই বিপাকে পড়েছে। কারণ ২০০০ টাকার নোট এর বেশিরভাগই বাজার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। তার অর্থ, তা মজুদ করছে একশ্রেণির লোক। সাধারণ লোক এত বেশি টাকার নোট বাজারে ব্যবহার করতেই পারছে না। দোকানে ভাঙানো যায় না।
২০০০ টাকার নোট কেউ নিতেও চাইছে না। চাপে পড়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০০০ টাকার নোট ছাপা বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ ইগো থেকে ফের ১০০০ টাকার নোট আর ফিরিয়েও অআনছে না। সব মিলিয়ে নোটবন্দির মূল উদ্দেশ্যগুলি সবই ব্যর্থ বলে পরিগণিত হয়েছে গত ৫ বছরে। একটাই কাজ হয়েছে। আতঙ্ক তৈরি করে সাধারণ মানুষের থেকে কর আদায় বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।