নিজস্ব প্রতিনিধি: যুগাবতার রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সাধন ভূমে দাঁড়িয়েই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি না করার আর্জি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের উদ্বোধনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনও হিন্দু, মুসলিম, শিখ বা খ্রিষ্টান কখনও ধর্ম নিয়ে অশান্তি করেন না। হিংসা বাঁধান না। কিছু রাজনৈতিক লোভী নেতা যাদের মাথাটা নোংরা ডাস্টবিন, তারাই হিংসা ছড়ান, অশান্তি পাকান। আমি আবারও বলছি, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নয়।’ তিনি নমাজ পড়েন বলে বিজেপি নেতারা লাগাতার যে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তার বিরুদ্ধেও এদিন সরব হন মুখ্যমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকে অপপ্রচার চালায় আমি নাকি নামায পড়ি। আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, নামায পড়ি না। তবে ইফতারে যাই। তাতে অসুবিধা কোথায়? যে কোনও ধর্মের মানুষই ইফতারে অংশ নিতে পারে। এটা তো ধর্মীয় রীতি নয়। আমি তো জৈনদের মন্দিরেও যাই। মন্দির করার জন্য এক কোটি টাকাও দিয়েছি। তখন তো প্রশ্ন ওঠে না।’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের নিয়ে বৈঠক করার পরে এদিন বিকেলেই দিল্লি থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি দক্ষিণেশ্বরে হাজির হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণ মন্দিরে যান, কুঠিবাড়িও ঘুরে দেখেন। পরে ভবতারিণী মন্দিরে পুজো দেন। তার পরে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের উদ্বোধন করেন। আর ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই ফের সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের পক্ষে সওয়াল করেন মমতা। বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের কাছে দক্ষিণেশ্বর মন্দির, ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব, রাণি রাসমনি, সারদা মা, স্বামী বিবেকানন্দের গল্প আর ইতিহাস শুনে বেড়ে উঠেছি। রামকৃষ্ণদেব বলে গিয়েছেন, টাকা মাটি, মাটি টাকা। তার মানে কী? প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু চাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু এখন সকলের সব কিছু বেশি বেশি করে চাই। সব মিটে যায়, তারপরও অতিরিক্ত চাওয়ার তো কিছু নেই। তিনি তা বুঝিয়ে গিয়েছিলেন, আজ আছি কাল নেই যখন তখন পরস্পরের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য কেন করব।’
ধর্মের কারবারীদের বিঁধে তিনি বলেন, ‘কোনও হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান কেউ অশান্তি পাকান না। হিন্দু ধর্ম তো অনেক উদার। কিন্তু তার নামে রাজনীতি চলছে। যাদের মাথা নোংরা জঞ্জালে ভর্তি, যারা কোনও ভাল কাজ করতে পারে না বা ভাল কোনও কথা বলতে পারে না, সব সময় খালি নোংরা নোংরা কথা বলে চলে তারাই অশান্তি পাকায়। সব সময় পাথর ছুঁড়ছে, গাড়িতে আগুন জ্বালাচ্ছে। মাঝে মধ্যে রাস্তায় বসে পড়ছে। কৈকেয়ী ও মন্থরার মতো তাঁদের মাথায় সবসময় কুভাবনা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের দেশের মহাপুরুষরা সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেছেন। আমিও তা বিশ্বাস করি। আমি সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী। সব ধর্মকে সম্মান করি। কিন্তু অনেকেই সেটা না করে বিভেদের রাজনীতি করছে’
এদিন দক্ষিণেশ্বরে পর্যটকদের টানতে হেলিপ্যাড গড়ে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে আশ্বাস দেন, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের উন্নয়নের কাছে সব সময় পাশে থাকবে রাজ্য সরকার। কেন্দ্র কিংবা অন্য কারও কাছে হাত না পাতার পরামর্শ দিয়ে মন্দিরের অছি পরিষদের সম্পাদক কুশল চৌধুরীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অতিথিশালা গড়ার জন্য কারও কাছে হাত পাততে হবে না। বাংলা ভিখারি নয়। মায়ের জন্য আমি বেঁচে থাকতে কখনও কারও কাছে হাত পাততে যাবে না।’
এদিন ধর্ম নিয়ে একদিকে তথাকথিত ধর্মের কারবারিদের যেমন বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তেমনই উচ্চমাধ্যমিকের ফেল করা পড়ুয়াদের পাশ করিয়ে দেওয়ার আবদার নিয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় তিনি যে হতাশ তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিকে ফেল হওয়ার পরেও রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন এগুলো কী হচ্ছে? এখানে ওখানে, যেখানে সেখানে বিক্ষোভ। আমি বলিনি যে বিক্ষোভ করা যাবে না। কিন্তু তা বলে উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করতে পারেনি বলে বিক্ষোভ! আমাদের সময়ে এসব কথা ভাবতেও পারতাম না।