পাইলস, ফিসচুলা, ফিস্যু একটি সাধারণ সমস্যা। বহু মানুষকেই এই ধরনের সমস্যার শিকার হতে দেখা যায়। অসহ্য যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে রোগী এক সময় জটিল অস্ত্রোপচারের সাহায্য নিতে বাধ্য হন। আবার অপারেশন করলেও বহু ক্ষেত্রে রোগ ফের জটিল আকার ধারণ করত। এমনকি পুরোপুরি সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যেত।
এবার থেকে বাঁচবে সময়, সমস্যার সমাধান হবে। অনায়াসে অপারেশনের পর দিন থেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব। এই নয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি এবং তার উপকারিতা সম্পর্কে পুবের কলম-কে বিস্তারিত জানালেন বিশিষ্ট ল্যাপ্রোস্কপিক অ্যান্ড গ্যাসস্ট্রোইন্টেস্টিন্যাল সার্জেন ডা. এম এন হক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সেখ কুতুবউদ্দিন এবং বিপাশা চক্রবর্তী।
এই অপারেশনে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে?
ডা. এম এন হক: ল্যাসোট্রনিক্স যন্ত্র। খুবই ছোট। সমস্তটাই পেনড্রাইভের সাহায্যে মাইক্রো প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে থাকে। মাইক্রো পদ্ধতিতে অপারেশনে অনেক সুবিধা।
কোথা থেকে এই মেশিন আনা হয়েছে?
ডা. এম এন হক: পোল্যান্ড থেকে ল্যাসোট্রনিক্স যন্ত্র আনা হয়েছে। এর মূল্য ১০ লক্ষ টাকা। পুরোপুরি মাইক্রো লেজার মেশিন। এই মেশিনের সহায়তায় আক্রান্তের জায়গাটিতে প্রবেশ করিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
কীভাবে অপারেশন হয়?
ডা. এম এন হক: প্রথমে আক্রান্ত স্থানটিকে চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করতে দেওয়া হয় রোগীকে। তার পর সেই রিপোর্ট দেখার পর অপারেশনের দিনক্ষণ ঠিক হয়। যে কোনও নার্সিংহোম অথবা একদিন থাকার জায়গা থাকলেই অপারেশন করে দেওয়া সম্ভব। আগে এই মেশিন এক জায়গায় ফিক্সড করে রাখা হত। আধুনিক এই মেশিন এত ছোট যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যে কোনও মুহূর্তে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
এই অপারেশন পদ্ধতির সুবিধা কী?
এই অপারেশনে লোকাল অ্যানাসথেসিয়া করা হয়ে থাকে। কোনও যন্ত্রণা হয় না। খরচ ৪০ হাজার টাকার মতো। সাধারণ ওপেন অপারেশনে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। নতুন এই পদ্ধতিতে জায়গাটাকে পুড়িয়ে অপারেশন করা হয়ে থাকে।
এই অপারেশনের পর ‘খাওয়া-দাওয়ার কোনও নিয়মকানুন থাকে কী?
প্রথম দিন একটু নিয়ম মেনে চলতে হয়। তার পর দিন থেকে যে কোনও খাবার খেতে পারে। স্বাভাবিক কাজ করতে কোনও অসুবিধা নেই।
মাইক্রো অপারেশনের সাফল্য সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
এই পদ্ধতিতে সাফল্য অনেকটাই বেশি। তবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে পুনরায় অপারেশনের সম্ভাবনা থাকে। যা ওপেন সার্জারির ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
পাইলস সমস্যা সর্বজনীন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কমবেশি প্রায় সবাই পাইলস সমস্যায় ভোগান্তির সম্মুখীন হন। পাইলসের রোগীদের পায়ুপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ, পায়ুপথ ফুলে যাওয়া, ব্যথা অনুভব করা, পায়ুপথ দিয়ে পাইলস বেরিয়ে আসা, মলদ্বারের চারপাশে চুলকানোসহ বিভিন্ন উপসর্গে পীড়িত হন। উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে অথবা অনেক সময় উপসর্গগুলো ত্বরিতভাবে মারাত্মক আকার ধারণ করলে জটিলতা রোগীর জীবনে হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। যেহেতু পাইলসের উপসর্গ কোলন অথবা রেক্টাল ক্যান্সারের উপসর্গ, তাই জনসাধারণের মধ্যে অনেক বেশি সচেতনতার প্রয়োজন।