আবদুল ওদুদ: রাজ্যের কয়েকটি জেলায় আধার কার্ড বাতিল হয়েছে। এই আধার কার্ড বাতিল হওয়ার জন্য গত রবিবার বীরভূমে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আধার কার্ড বাতিল নিয়ে সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্নে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন আধার কার্ডের বিকল্প কার্ড তৈরি করবে রাজ্য সরকার। যাঁদের আধার কার্ড বাতিল হচ্ছে তাঁদের হাতে রাজ্য সরকারের ওই পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হবে। ওই কার্ড দিয়েই রাজ্য সরকারের সব প্রকল্পের সুবিধা সাধারণ মানুষ পাবেন বলে দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন চারদিনের মধ্যেই নতুন কার্ড মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান কারও আধার কার্ড বাতিল হলে এবং আধার কার্ড নিয়ে কোনও সমস্যা হলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি আধার গ্রিভান্স পোর্টালও মঙ্গলবার থেকে চালু করবে রাজ্য সরকার। আধার কার্ড বাতিল হলে সেই সংক্রান্ত অভিযোগ ওই পোর্টালে জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন এটা পশ্চিমবঙ্গ, এটা দিল্লি নয়। জবাব দিন কেন আধার কার্ড বাতিল করছেন? এর পর বলবে এখন নাম কাটলাম পাঁচ বছর পরে নাগরিকত্ব দেব। এবার সংখালঘু, তফশিলি, মতুয়া ভাইবোনেরা বুঝতে পারছেন তো ওদের গেমপ্লানটা কী!’ বাংলা ওদের জমিদারি মানবে না। ওরা যা করছে তাতে আগের জমিদারদের হার মানাবে।
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, বেছে বেছে নমঃশূদ্র, সংখ্যালঘু , তপশিলি ও মতুয়াদের আধার কার্ডই বাতিল করা হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁর কাছে আধার কার্ড বাতিলের অভিযোগ এসেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এ দিনও স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাজ্যে কোনও ভাবেই এনআরসি কার্যকর করতে দেওয়া হবে না। বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেবেন না। ওরা আসামে করুক, মনিপুরে করুক। কিন্তু বাংলায় কোন ভাবেই করতে দেব না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, আমরা এসব এখানে করতে দেব না কারণ এটা বাংলা আমরা প্রতি পদে যুদ্ধ করছি ভোট ঘোষণা হওয়ার দশ পনেরো দিন আগে এটা কী ধরনের রাজনীতি। বাংলার মানুষকে নিয়ে ছেলে খেলা বরদাস্ত করব না। মমতা এদিন বলেন বাংলার কোনো মানুষকে না খেয়ে মরতে দেব না। তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্রের সরকার বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্ঠা করছে। বাংলার মানুষকে বঞ্চিত হতে না দেওয়ার জন্য যা করার করব বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলার ক্ষমতা আছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন হাথরস,বিলকিসবানু প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বিজেপির হাত থেকে সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আধার কার্ড নিয়ে যারা খেলা করছেন তারা কী মানুষ? এই সমস্ত মানুষরা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আধার জগতে ফেলে দেবেন । আধার কার্ডের অত্যাচারে অসহয়তা বোধ করবেন না। বিকল্প কার্ড দেব আমারা সেই কার্লে সমস্ত সুবিধা পাবেন আপনারা। বাংলায় জমিদারদের জমিদারি চলবে না। বাংলাকে দমানো যাবে না। আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব।
আধার কার্ড নিয়ে যা যা অভিযোগ আসবে আমি দেখবো। মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমি তিন দিনের মধ্যে আপনাদের নতুন কার্ড পৌঁছে দিব। ভয় পাওয়া কিছু নেই। আমি এনআরসি হতে দেব না । কেন্দ্রের এই ফ্যাসিবাদি চক্রান্ত রুখবো।
মমতা ব¨্যােপাধ্যায় বলেন, ওরা এখন পর্যন্ত কী সমাধান করতে পেরেছে। বিজেপিকে ভারতীয় জঞ্জাল পার্টি বলে কটাক্ষ করেন। বিকল্প পরিচয়পত্র দেওয়ার ঘোষণা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আধার কার্ড নিয়ে যাঁরা ছেলেখেলা করছেন মানুষই তাদের আঁধারে ফেলে দেবেন। মনে রাখবেন এর বিচার হবে, কোনও অসুবিধা হলে আমাদের জানান, আমরা বিকল্প কার্ড দেব যার ফলে আপনার নাগরিকত্ব রক্ষা হবে, সব সুবিধাও পাবেন।’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যাঁদের আধার কার্ড বাতিল হচ্ছে তাঁরা বাতিল হওয়া আধার নম্বর দিয়ে রাজ্য সরকারকে জানালে বিকল্প কার্ড দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যের বাসিন্দাদের সরকারি সুবিধা দেওয়া রাজ্যের দায়িত্ব। ফলে রাজ্য সরকার চাইলেই বিকল্প পরিচয়পত্র দিতে পারে।
রাজ্য সরকার, জেলা প্রশাসন কিছুই জানে না। জমিদারের মতো আচরণ করে এসব করছে। তাহলে কার্ড করার দরকার কী ছিল? সব তথ্য তো নিয়েছিলেন। বডি স্ক্যানও তো করেছিলেন। কার দেহে কী অসুখ জেনেও তো করেছিলেন। আধারকে ব্যাঙ্কে লিঙ্ক করেছিলেন। আধার কার্ডের নামে অত্যাচার হয়েছে। ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আধার কার্ড ছাড়া কোনও সুবিধা পাবে না। গরিব মানুষরা পাবেন না? ভোটের আগে এনআরসি করা নিশ্চয়ই বিজেপির পরিকল্পনা ? আগে মানুষের আধার কার্ড কেড়ে নিলাম, তারপর ক্যা দেব। টাকা দিয়ে তো আধার কার্ডটা করেছেন। মানুষকে বঞ্চিত হতে দেব না, যা করার করব।’
মমতা বলেন, বিজেপির একমাত্র কাজ হল মানুষকে বিরক্ত করা। অপদার্থ রাজনৈতিক দল একটা। মানুষের বিপদে পাশে নেই। এর মদতদাতা হচ্ছে সিপিএম এবং এখানকার কংগ্রেস। বাংলাকে ভয় পায়, তাই এসব করছে। আমি নির্বাচন কমিশনেও একটা টিম পাঠাচ্ছি। তারা জানুক এটা। এভাবে চলতে পারে না। প্রয়োজনে আইনের সাহায্য নেব। ভোটের আগে এটা কেমন লুকোচুরি খেলা?
এটা ফ্যাসিবাদী চক্রান্ত। রাজ্যকে জানাবে না মানে? রাজ্যই তো নিরাপত্তা দেবে। বিজেপি পার্টি অফিস মিথ্যা কথা ছাড়া আর কী করবে? সবাই বলে ভারতীয় জঞ্জাল পার্টি। আমার কাছে অভিযোগ আসছে। কোনও এনআরসি এখানে হবে না। কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প হবে না। এটা কবিগুরু, নজরুল, জীবনানন্দের বাংলা। ৩৫৫টা কমিটি পাঠিয়েছে বাংলায়। রোজই কাউকে না কাউকে পাঠায়। আর চোপড়ায় শিশু মারা গেলে টিকিটাও দেখা যায় না। আমি তফসিলি, সংখ্যালঘু, জেনারেল কাস্ট সকলকে নিশ্চিত করতে পারি, বাংলায় এনআরসি আমরা করতে দেব না। আমরা জীবন দিয়ে লড়াই দিয়ে রুখব।