পুবের কলম প্রতিবেদক: চোখ ছানি অপারেশনে এবার সরকারি হাসপাতালগুলিকে জোর দিতে হবে। বুধবার স্বাস্থ্য ভবনের এক রিভিউ বৈঠকে এ কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। এই বিষয়ে জেলা হাসপাতাল ও গ্রামীন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘চোখের আলো’ দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে পুরস্কার আদায় করেছে। রাজ্যে দশটি স্যাটালাইট ছানিকাটার ওটি চালু হয়েছে।
বেসরকারি উদ্যোগে ছানিকাটার কাজ রাজ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি হচ্ছে। কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছে সরকারি হাসপাতাল। বেসরকারি হাসপাতাল বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্যাম্প করে ছানি কাটছে। চশমা দিচ্ছে। ছানি কাটায় কেন পিছিয়ে পড়ছে সরকারি হাসপাতাল, কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্যভবনে রিভিউ মিটিংয়ে এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে ওঠে। তাই সব জেলা ও জেলা হাসপাতালগুলিকে আপাতত তিনমাসের সময় বেঁধে দেওয়া হল ছানি কাটার সংখ্যা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে।
রাজ্যের সবাই যাতে বিনা পয়সায় চিকিৎসা পান সেইজন্য করা হয়েছে ‘স্বাস্থ্যসাথী’। গ্রামের মানুষের সুবিধার জন্য রাজ্যে চালু করা হয়েছে ‘দুয়ারে চিকিৎসক’ প্রকল্পও। তেমনই রাজ্যের সবার চক্ষু চিকিৎসা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার লক্ষ্য নিয়ে চালু করা হয়েছে ‘চোখের আলো’ প্রকল্প। ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি এই প্রকল্প চালু করা হয় রাজ্যে।
মাত্র দুবছরেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে এই চোখের আলো’ প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের মানুষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা দূর করার লক্ষ্য নিয়েই এই প্রকল্প চালু করা হয়। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, চোখের আলো প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষাধিক শিশু স্কুল পড়ুয়ারা এবং ৪৫+ বয়সের লোকেরা ছানি অপারেশন এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে স্বনির্ধারিত চশমা প্রদানে উপকৃত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের সাফল্যের কথা। জানানো হয়েছে, এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে ১০ লাখের বেশি ছানি অপারেশন করা হয়েছে। বিনামূল্যে প্রায় ১৫ লাখ চশমা প্রদান করা হয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে রাজের সমস্ত মানুষের চোখের চিকিৎসা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে। ‘চোখের আলো’ প্রকল্পে শুধুমাত্র দরিদ্র মানুষ নয়, স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পড়ুয়াদেরও চোখে পরীক্ষা করে প্রয়োজনে বিনামূল্যে চশমা বিতরণ করা হবে। প্রকল্পের লোগো এবং নামকরণ দুটিই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যে এমন অনেক বয়স্ক নাগরিক রয়েছেন যারা দুর্বল, আর্থিক অবস্থার জন্য চোখের চিকিৎসা করাতে পারেন না। ফলে তাঁদের দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যায়। সেইসমস্ত লোকেদের চোখের চিকিৎসা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে এই প্রকল্প চালু করা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে সমস্ত রাজ্যবাসীর চোখের যত্ন নেওয়াই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
চোখের আলো প্রকল্পের সুবিধা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, বয়স্কদের ছানি অপরাশন থেকে শুরু করে শিশুদের চোখের সবরকম সমস্যাজনিত চিকিৎসা করা হয়। এই প্রকল্পে প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষের বিনামূল্যে চোখের পরীক্ষা ও ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ছানি অপরাশন করা হয়। রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দারাই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। ছাত্রছাত্রীদের এই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার জন্য ৩০০-র বেশি চিকিৎসক এবং ৪০০-র বেশি টেকনিশিয়ান নিযুক্ত করা হয়েছে।