বিশেষ প্রতিবেদকঃ অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মাস খানেক ধরে কলকাতার ক্যামাক স্ট্রীটের দফতরে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ব্লক এবং পঞ্চায়েতস্তর নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন। সপ্তাহ দু’য়েক আগেই মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে একই বৈঠক করে বার্তা দিয়ে ছিলেন, জেলা, ব্লক এবং পঞ্চায়েত স্তরে দলের সুনাম অক্ষুন্ন রা’তে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়াও অন্য কোনও দলের সদস্যদের ধমকানো, চমকানো চলবে না। মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের সুনাম অক্ষুন্ন রা’তে এই বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু লালগোলা বিধানসভার বিধায়ক ঘনিষ্টরা শীর্ষ নেতৃত্বের কথা অমান্য করে সিপিএম- কংগ্রেসের দেওয়ানসরাই অঞ্চলের সদস্যদের ধমকানো এবং চমকানোর অভিযোগ উঠল। দিন কয়েক ধরে দেওয়ারসরাই অঞ্চল নিয়ে তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেসের মধ্যে এক অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আর এই অশান্তির মূলেই নাকি বিধায়কের ঘনিষ্ট কয়েকজন।
উল্লেখ্য, দেওয়ানসরাই অঞ্চলে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের সমর্থনে তৃণমূলের পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন হয়। তার প্রধানও ছিল তৃণমূলেরই আবদুল কাদের। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে ‘বহিরাগত তত্ত্ব’ দিয়ে বিধায়ক মুহাম্মদ আলির নামে ফেসবুকে এক বিবৃতি দেন আবদুল কাদের। আর তাতেই মুহাম্মদ আলির বিরাগ ভাজন হয় আবদুল কাদের। ত’ন থেকেই চলে এই প্রধানের উপর মানষিক নির্যাতন বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূলের প্রধান আবদুল কাদের জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান, জেলা পর্যবেক্ষক কনাই লাল মণ্ডল এবং আবু তাহের খানের কাছে বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন। এর পরেই আবদুল কাদেরে বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে প্রধান পদ থেকে অপসারন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় ২২ শে আগস্ট নয়া পঞ্চায়েত গঠন হবে। কিন্তু বাম এবং কংগ্রেস একজোট হয়ে ফের দেওয়ানসরাই অঞ্চল পঞ্চায়েত গঠন করতে সংঘবদ্ধ হয়।
দেখা যাচ্ছে ওই পঞ্চায়েতে মোট সদস্য রয়েছে ২৪ জন। তার মধ্যে ১১ জন বর্তমানে তৃণমূলে , আবদুল কাদেরকে ধরে। বাকি ১৩ জনের ৮ জন কংগ্রেসের, ৫ জন সিপিএমের। ১৩ জন সদস্যই একটা শিবিরে আত্মগোপনে রয়েছেন। তৃণমূলের যে ১১ জন সদস্য রয়েছে তার মধ্যে ৪ জন সদস্য অপসারিত প্রধানের দিকে রয়েছেন বলে দাবি। ফলে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন নিয়ে বিধায়ক ঘনিষ্ঠদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েও আসছে। জগন্নাথ পুরের এক কংগ্রেস সদস্যের বাড়িতে বিধায়ক ঘনিষ্ঠ মিনারুল ইসলাম ওরফে রকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। কংগ্রেসের ওই সদ্যসার স্বামীর দাবি রকি তার ফোন থেকে কংগ্রেস সদস্যকে দেখাচ্ছেন প্রশাসনের নির্দেশেই তিনি নাকি এই কাজ করছেন।
অন্যদিকে, আরও এক কংগ্রেস সদস্য রাফিকের অভিযোগ, বিধায়ক ঘনিষ্ঠরা তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে । চকপাড়াগ্রামের কংগ্রেস সদস্য আনসার আলির বাড়িতেও প্রায় ৪০ জনের এক মোটর বাইক বাহিনী চড়াও হয়। তাদের জানে মারারও হুমকি দেয় বলে আনসারের স্ত্রী, মা এবং এক ভাই জানান। আনসারের স্ত্রী সালেহা খাতুনের অভিযোগ, ‘মোটর বাইকে বলে এসে বিধায়ক ঘনিষ্ট উজির, জহিরুল, রকি সহ আরও কয়েকজন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছে। সোমবার যদি আনসার পঞ্চায়েতে যায় তা হলে মাটিতে পুতে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। ’এই ঘটনায় এলাকা তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ বেশ আতঙ্কিত। তাঁদের প্রশ্ন ‘যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা নেতৃত্বকে স্বচ্ছ রাজনীতি করার পরামর্শ দিচ্ছেন সেক্ষেত্রে বিধায়কের লোকজন কার মদতে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছেন। ’
এই ঘটনায় কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি যদুরাম ঘোষ বলেন, ‘ আমরা আতঙ্কিত, পুলিশকে জানিয়েছি, নিরা™ত্তার অভাব বোধ করছি। এলাকায় তৃণমূলের লোকজন হুমকি দিচ্ছে , সোমবার পর্যন্ত নিরাপত্তা চেয়েছি।
তৃণমূলের ব্লকসভাপতি মুহাম্মদ দেলসাদ আলি বলেন, যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে সেটা ঠিক করেনি। দল কাউকে এই এই ধরনের কাজ করার পরামর্শ দেয়নি। যদি কোনও তৃণমূলকর্মী কারও বাড়িতে ধমকায় এবং চমকায় তার দায় ওই ব্যক্তিকেই নিয়ে হবে। দল তার পাশে থাকবে না।
বিধায়ক মুহাম্মদ আলির দাবি ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ, যারা অভোযোগ করছেন, প্রত্যেকের হাতে অ্যানড্রয়েড ফোন রয়েছে। যদি কেউ এইধরনের ঘটনা ঘটায় তাহলে রেকর্ড করে রাখুক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কেউ যদি মিথ্যার উপর দাড়িয়ে এই দাবি করে ,তা মেনে নেওয়া হবে না।’
কংগ্রেস নেতা মতি সেখ বলেন, ‘বিধায়ক তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে শনিবার রাতেও দাপিয়ে বেরিয়েছেন। কাজেই তিনি যে দাবি করছেন। সেই দাবি সঠিক নয়। ’