কিবরিয়া আনসারী, কলকাতা: টিকিট পরীক্ষকের হাতে হেনস্থার শিকার একদল পরিযায়ী শ্রমিক। বৈধ্য টিকিট থাকার সত্ত্বেও ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দীর্ঘক্ষণ জেরা করার পাশাপাশি টাকা দিতে না পারায় মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ করেন কেরল ফেরত শ্রমিকরা। এই ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছে তারা। ঘটনাটি কলকাতার শালিমার স্টেশনের।
জানা গিয়েছে, কেরলের আলুভা স্টেশন থেকে শালিমার সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন শ্রমিকরা। প্রায় ১৫ জন শ্রমিক তারা প্রত্যেকেই মুর্শিদাবাদের।
বেশকয়েক জনের রিজার্ভেশন টিকিট থাকলেও বাকিরা ৫১০ টাকা দিয়ে আলুভা স্টেশনেই টিকিট কেঁটে নেন। যাদের রিজার্ভেশন টিকিট ছিল না তাদের আলাদা ভাবে ট্রেনেই ৫০০ টাকা ফাইন দিতে হয়। ট্রেনের কর্তব্যরত টিকিট পরিক্ষক তাদের ফাইনের রিসিভ দিয়ে জানান, এই রিসিভ নিয়েই তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। কোনও অসুবিধা হবে না। এরপরই গত রবিবার বিকেলে কলকাতার শালিমার স্টেশনে নামতেই কয়েকজন টিটি তাদের আটকায়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, টিকিট দেখতে চাইলে তা দেখানো হয়। তারপরও তাদের নানান ভাবে হেনস্থা ও গালাগালি করা হয়। একজনের কাছে টাকা না থাকায় তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। একজন অন্যের কাছে ধার করে টিটিকে টাকা দেয়। এমনকি উলুঙ্গ করে চেক করার নিদান দেওয়া হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকলের রঘুনাপুরের বাসিন্দা জিয়ারুল মন্ডল (৩২)। ১৬ ও ১১ বছরের দুই ছেলের পড়াশোনা, সংসার ও সপ্তাহে ঋীনের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অভাবের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়। অভাবের সংসারে হাল ফেরাতে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কেরলে শ্রমিকের কাজ করেন। গত ২ মাস কাজ না থাকায় বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ৩ হাজার টাকা ধার করে বাড়ি ফিরছিলেন জিয়ারুল।
জিয়ারুল মন্ডলের অভিযোগ, টিটি আধার কার্ড চাইল। সেটা দিতেই সঙ্গে সঙ্গে ধমক দিয়ে বলে জাল আধার কার্ড দিয়ে চালাকি হচ্ছে। ভোটার কার্ড দেখতে চাইলে সেটাও দেখাই। তারপর টিকিট দেখতে চাইল। টিকিট’টি দেওয়া মাত্র তিনি পকেটে ঢুকিয়ে নেন। তারপর বিনা টিকিটের দায়ে ফাইন বাবদ ১৬৫০ চাওয়া হয়। কিন্তু আমার কাছে ছিল ১২০০ টাকা। সবটা ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক নিয়ে নেয়।
জিয়ারুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কলকাতা থেকে বাড়ি ফেরার জন্য কাকুতিমিনতি করলে ৩০০ টাকা ফেরত দিয়েছিল। আমাকে ফাইনের রিসিভ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। পরে বুঝেছি টাকা ইনকামের নতুন পন্থা এটি। সেদিন আমার মত অনেককেই হেনস্থার শিকার হয়েছেন।’
ডোমকলের কামুড়দিয়ার সাহেবপাড়া বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনিও একই ঘটনার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বৈধ্য টিকিট থাকার সত্ত্বেও মোটা অঙ্কের ফাইন করা, হেনস্থা করা হয়েছে। আগে পুলিশ এমনটা করত, এখন টিটিরা করছে। অন্যরাজ্যে আমাদের হেনস্থা হতে হয় না। বাংলাতেই এমনটা হয়।’ পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা বন্ধ করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আর্জি জানিয়েছেন তারা।