আর্জেন্টিনা ৩ ফ্রান্স ৩
টাইব্রেকারের ফল
আর্জেন্টিনা ৪ ফ্রান্স ২
পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক : রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল। ৩৬ বছরের শাপমুক্তি আর্জেন্টিনার। ফ্রান্সকে হারিয়ে তৃতীয়বারের জন্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। প্রত্যাশিত সোনার কাপ উঠল মেসির হাতে। ১৬ বছর পর ফের কোনও বিশ্বকাপ ফাইনালের ফলাফল নির্ধারিত হল টাইব্রেকারে। আর সেই একই ঘটনার পুরনাবৃত্তি ঘটাল ফ্রান্স। ২০০৬ সালের ফাইনালে টাইব্রেকারে ইতালির কাছে হেরেছিলেন ফরাসিরা। এবার তারা হারলেন মেসির আর্জেন্টিনার কাছে।
দুটো বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেও স্বপ্নপূরণ হয়নি মেসির। তাই এবার গোটা আর্জেন্টিনা স্কোয়াড মরিয়া ছিল বিশ্বকাপটা মেসির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। আর সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে খেলতে নেমে আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলে জোর দিল। তার ফলও পেল। ম্যাচের ২২ মিনিটে দারুণ গতিতে মুভ করার সময় ডি মারিয়াকে বক্সে ফাউল করা হলে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। সেখান থেকে গোল করে আলবিসেলেস্তেদের এগিয়ে দেন মেসি। ৩৬ মিনিটে একটা দুর্দান্ত মুভ। ডান দিক থেকে ম্যাক অ্যালিয়েস্টার ঠিকানা লেখা পাসে দুরন্ত সোলো রানে গোল করে গেলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। হাফ টাইমের আগেই দু’গোলে এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও আর্জেন্টিনা বেশ ভালোই করেছিল। আচমকাই দ্বিতীয়ার্ধে কয়েকটি পরিবর্তন করলেন দিদিয়ের দেশঁ। আর তাতেই কিস্তিমাত। যে আর্জেন্টিনার ডিফেন্স কার্যত দূর্গে পরিণত হয়েছিল, কামাভিঙ্গা ও কিংসলে কোম্যান নামাতে ফ্রান্স যেন পুরোই বদলে গেল। যে ফ্রান্সকে দেখা গিয়েছিল গুটিয়ে থাকতে, আচমকাই যেন এমবাপ্পে নামক আগ্নেয়গিরি জেগে উঠল। ৭০ মিনিটের পর থেকে পুরো খেলাটা ধরে নিল ফ্রান্স। মুনাই নামার পরেই ফ্রান্স নাগাড়ে আক্রমণ করতে শুরু করল।
সেই মুনাইকে আটকাতে গিয়ে বক্সে ফাউল করে ফেললেন ওটামেন্ডি। পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমালেন সেই এমবাপ্পে। কাতার বিশ্বকাপের গোলসংখ্যায় মেসিকে ধরে ফেললেন এমবাপ্পে। ঠিক একটা মিনিটের মধ্যেই আবার একটি ডিফেন্স চেরা আক্রমণ। থুরামের পাস থেকে এমবাপ্পে দুর্দান্ত একটা মুভে সমতা ফিরিয়ে আনলেন। দিদিয়ের দেশঁ শান্ত মাথায় তিনটি পরিবর্তনেই বাজিমাৎ করলেন। দুটো গোল করার পরেই ফ্রান্স যেন দৈত্য হয়ে উঠল। একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়তে লাগল আর্জেন্টিনা ডিফেন্সে।
দুরন্ত কামব্যাক ফ্রান্সের। এমবাপ্পে, ওসমান ডেম্বেলে, থুরাম, দায়োত উপামেকানো, কউন্ডে, মুনাই, ইুউসুফ ফোপানা, কিংসলে কোম্যান, কামাভিঙ্গা এবং থুরাম, ইব্রাহিম কোন্তে। এগারো জন কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার। সাধারণত ইউরোপে কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারদের একটু খারাপ নজরে দেখা হয়, কিন্তু তারাই বাজিমাৎ করে দিয়েছিলেন। তরুণ ব্রিগেড নামাতেই থমকে থাকা ফরাসি কনকর্ড যেন দুর্বার গতিতে এগোতে থাকল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ালো অতিরিক্ত সময়ে। ফ্রান্সের মতো কঠিন দলের বিরুদ্ধেও যেভাবে প্রথম থেকে চ্যাম্পিয়নের মতো খেলতে শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা, দ্বিতীয়ার্ধের শেষ পনেরো মিনিট সেই ফুটবল উধাও আলবিসেলেস্তেদের।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে ফের দুরন্ত মেসি। সুবাস ছড়ালেন গোল করে। কিন্তু তারপরও যে আরও নাটক অপেক্ষা করছিল সেটা বোধহয় কেউ বুঝতে পারেননি। পেনাল্টি থেকে গোল করে এবারের বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করে বসলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ম্যাচ গড়ালো টাইব্রেকারে। আর সেখানে এমিলিয়েনো মার্টিনেজের বিশ্বস্ত হাত প্রয়াত মারাদোনার স্বপ্নকে সার্থক করল। তৃতীয়বারের জন্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।