পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বর্ধমানের ঐতিহাসিক টাউন হলে বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের উদ্যোগে ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংখ্যালঘু অধিকার দিবস পালন উপলক্ষে একটি বিশাল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্পর্কে সাংবাদিক সফিকুল ইসলাম বলেন– দর্শকে পরিপূর্ণ টাউন হলে এই ধরনের অনুষ্ঠান এই প্রথম।
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সভাপতি অধ্যাপক ওয়ায়েজুল হক– প্রাক্তন সাংসদ ও পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান– সম্পাদক আলমগীর মোল্লা– বিধায়ক অলোক মাঝি– জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসান– পীরজাদা মহেবুল্লাহ হুসাইনি– বর্ধমান পুরসভার উপ-প্রশাসক আইনুল হক প্রমুখ।
সেখানেও বিভিন্ন বক্তা সংখ্যালঘু অধিকার প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবি জানান। আহমদ হাসান ইমরান বলেন– ‘সারা পৃথিবীতেই সংখ্যালঘুরা বঞ্চিত। আমেরিকায় কালোরা নিপীড়িত। কারণ তাদের গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ। সেখানে তারা সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘুদের পাশে সকলকে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি আরও বলেন– ‘বৌদ্ধ প্রধান মায়ানমারের আরাকান প্রদেশ থেকে সমস্ত রোহিঙ্গা মুসলিমকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ জন্য ধর্ষণ– গণহত্যা– গ্রাম পোড়ানো প্রভৃতি অমানুষিক নৃশংসতার সহায়তা নেওয়া হয়েছে। মায়ানমারের সেনাবাহিনীও এই কাজে অংশ নিয়েছে। প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা এখন মানবেতর পরিবেশে বাংলাদেশে রয়েছে। কিন্তু বার্মীজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’
ইমরান আরও বলেন– ‘ভারতের সংখ্যালঘুদের হিন্দু সমাজের সঙ্গে হার্দিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সংবিধান প্রদত্ত শিক্ষার অধিকার– ধর্মীয় স্বাধীনতা– আবাসনের অধিকার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইক্যুয়াল অপরচুনিটি বা সমসুযোগ সকল নাগরিককে দিতে হবে।
অধ্যাপক ওয়ায়েজুল হক বলেন– ‘মানবদেহের শিরদাঁড়ার মতো সংখ্যালঘু সমাজ ভারতীয় ঐতিহ্যের কাঠামো মজবুত করে রেখেছে। তিনি উপচে পড়া হলে জনসমাবেশের উদ্দেশ্যে বলেন– কাউকে তোষণ করবেন না। অপশাসন– তোলাবাজ ও অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভেদ দূর করে তিনি তাদের মধ্যে ঐক্যের ডাক দেন।
তিনি বিএসএফের সীমানা ১৫ কিমি থেকে ৫০ কিমি বাড়ানোর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং বলেন– এর ফলে সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ওয়ায়েজুল হকও সম্প্রতি ওঠা দাবি যে– বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুদিনকে ‘নারী শিক্ষা দিবস’ পালন করতে হবে এবং ডায়মন্ডহারবারে যে মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়টি রয়েছে তার নামকরণ নারী শিক্ষার অদ্রগূত বেগম রোকেয়ার নামে করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন তাঁর দাবি অনুযায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের জন্য বেশ কিছু ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা তৈরি করেছেন। তিনি অভিভাবকদের বলেন– ‘আগামীদিনে ছেলে-মেয়েদের ভাল করে ইংরেজি শেখাতে হবে। তার জন্য ইংরেজি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই।’
অধ্যাপক ওয়ায়েজুল হক আরও বলেন– ‘বিজেপি সরকার ব্যাপক হারে স্থানের এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মুসলিম নাম পরিবর্তন করছে। এটা খুবই অন্যায়। ভারতের ঐতিহ্য এইভাবে বিনষ্ট করা যাবে না।’
বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সম্পাদক আলমগীর মোল্লা বলেন– ‘আমাদের সংগঠন শুধু সংখ্যালঘু নয়– সকল মানুষের অধিকার অর্জনের জন্য কাজ করে যাবে।’
এদিন বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের নতুন বর্ধমান জেলা কমিটি গঠন করা হয়। ওয়ায়েজুল হক নতুন সম্পাদক হিসেবে ওসমান গনি ও সভাপতি হিসেবে মুহাম্মদ কোরবান আলি সেখের নাম ঘোষণা করেন।