পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গুজরাত নির্বাচনে ৩০টির বেশি নির্বাচনী সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই নিয়ে টানা এই নিয়ে ৭ বার গুজরাতে সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। গুজরাতে বিজেপির এই জয় পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের মেয়াদকে ছুঁয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ছিল, গুজরাতে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া রয়েছে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে কার্যত নিজের কাঁধেই প্রচারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বারবার বলেছিলেন, এই গুজরাত তাঁর তৈরি। কোনও রাখঢাক না করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ২০০২-এর দাঙ্গায় ‘ওদের উচিত শিক্ষা’ দেওয়া হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর ভোটের ফল ঘোষণা শুরু হতেই দেখা গেল গুজরাত জুড়ে গেরুয়া ঝড়। গোধরা, নারোদাপাতিয়ার মতো এলাকায় বিজেপি হইহই করে জিতেছে। গুজরাত ভোট প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছিল ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। এই ভোটের ফলই ২০২৪-এর রূপরেখা তৈরি করে দেবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নিজরাজ্যে গত ২৫ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড জয় এনে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী জানালেন, যারা নিরপেক্ষতার কথা বলে এবার তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘আমি জনতা জনার্দনের সামনে মাথানত করছি। জনতা জনার্দনের আশীর্বাদ অপ্রতিরোধ্য। জে পি নাড্ডার নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা যে কঠোর পরিশ্রম করেছেন, আজ আমরা চারদিকে তা অনুভব করছি। যেখানে ভারতীয় জনতা দল সরাসরি জিততে পারেনি, সেখানেও বিজেপির ভোট শতাংশ বিজেপির প্রতি জনতার স্নেহের সাক্ষ্য। আমি গুজরাত, হিমাচল ও দিল্লির জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করছি।’ দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গুজরাতের মানুষ রেকর্ড ভেঙেও রেকর্ড করেছে। ইতিহাস তৈরি হয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম নরেন্দ্র কঠোর পরিশ্রম করবে যাতে ভূপেন্দ্র নরেন্দ্রর রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে। গুজরাত প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সব রেকর্ড ভেঙেছে। বিজেপি গুজরাতের প্রতিটি পরিবারের প্রতিফলন এবং প্রতিটি পরিবারের অংশ। বিজেপি যে জনসমর্থন পেয়েছে তা হল ভারতের তরুণদের ‘তরুণ চিন্তা’র বহিঃপ্রকাশ। বিজেপি যে জনসমর্থন পেয়েছে তা হল দরিo, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য প্রাপ্ত সমর্থন। মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে কারণ বিজেপির কাছে দেশের স্বার্থে সবচেয়ে বড় এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছিলেন যে গুজরাতে বিজেপির আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের সমর্থন রয়েছে। উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত ৪০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩৪টি আসন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে জিতেছে। আদিবাসীদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে বিজেপি। বিজেপি একজন আদিবাসী সভাপতি নির্বাচিত করেছে।’
উল্লেখ্য, ভোটের আগে একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীকে বদল করা হয়েছে। মোরাবিতে সেতু বিপর্যয়ে মৃত্যু মিছিলের সাক্ষী থেকেছে গুজরাত। সবথেকে বড় কথা কর্তব্যে গাফিলতিতেই যে বিপর্যয় তাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যে পুরসভা এই ব্রিজ তৈরি করেছিল সেই পুরসভাতেও ক্ষমতায় বিজেপি। ভোটের ফল ঘোষণা হতে দেখা গেল সেই মোরবিতেও বিজেপি বড় ব্যবধানে জিতেছে। বিজেপি এবার বিগত সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। এবার তারা ১৫৬টি আসন পেয়েছে। গতবারের থেকে ৫৭টি আসন বেশি। তুলনায় অনেক কমেছে কংগ্রেসের আসন। তারা পেয়েছে ১৭টি আসন। গতবারের থেকে ৬১টি আসন কম। প্রথমবার ভোটে লড়ে আপ পেয়েছে ৫টি আসন। এই ফলাফল তাদের আঞ্চলিক দল থেকে জাতীয় দলের মর্যাদা এনে দিয়েছে। জানা গিয়েছে, দ্বিতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন ভূপেন্দ্র পটেল। আগামী ১২ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে পারেন তিনি। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রমুখরা। তথ্য বলছে, সেই ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদি। সেবার বিজেপি জিতেছিল ১২৭ আসনে। এবার তারা জয়ী হয়েছে ১৫৬ আসনে। কংগ্রেসের মুখ রক্ষা করেছেন বলা চলে দলিত মুখ জিগ্নেশ মেভানি। হার্দিক প্যাটেল, অল্পেশ ঠাকুররা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ভোটে জয়ী হয়েছেন। ২০১৭-য় নির্দল হিসেবে জয়ী হওয়া মেভানি এবার যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে। বডগাম আসন থেকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর প্রায় ৫ হাজার ভোটে তিনি জয়ী হন।
তবে গুজরাত জিতলেও ৫ রাজ্যে উপনির্বাচনে ভালো ফল করতে পারেনি বিজেপি। যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশেও পদ্ম-ঝড় দেখা যায়নি। তবে আজম খানের আসনটি বিজেপি দখল করে নিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ২ বিধানসভা আসনের একটিতে জিতেছে আরএডি। অন্যটিতে বিজেপি। খাটাউলি বিধানসভায় উপরনির্বাচ জিতলেন আরএলডি প্রার্থী মদন ভাইয়া। রামপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন বিজেপির আকাশ সাক্সেনা। এ দিকে মইনপুরি লোকসভায় নিকটতম প্রতিদ্ব¨µীর থেকে ২ লক্ষ ভোটে এগিয়ে জেতার পথে অখিলেশ যাদবের স্ত্রী ডিম্পল যাদব। ওড়িশায় ১ আসনের উপনির্বাচনে জয়ী বিজেডি। ছত্তিশগড়ের একটি আসনেও জয়ী কংগ্রেস। রাজস্থানে সর্দারশহর বিধানসভা আসনে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। তবে, বিহারের একটি আসনে অবশ্য জিতেছে বিজেপি।