রুবায়েত মোস্তাফা, কোচবিহার: অবশেষে সকল উৎকণ্ঠার অবসান। মঙ্গলবার রাতে উত্তরকাশীর অন্ধকার সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করা হল। এই ৪১ জন শ্রমিকের মধ্যে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ‘চেকাডরা গেরগেন্দারপাড়’ গ্রামের মানিক তালুকদারও রয়েছেন।স্বাভাবিকভাবেই ছেলের উদ্ধারের খবর সামনে আসার পর মঙ্গলবার রাত থেকে পরিবারে বইছে খুশির হাওয়া।
৫১ বছরের মানিক তালুকদার পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। মঙ্গলবার সকাল থেকেই মানিক তালুকদারের গ্রামে প্রায় সকলেই নিজেদের বাড়ির টিভিতে চোখ রেখেছেন। সকলেরই নজর ছিল উদ্ধার কাজের খবরে। উদ্ধার পর্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ তাঁদের নখদর্পনে ছিল। টিভি সাংবাদিকের ব্রেকিং নিউজ শুনতে চরম আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন সকলে।
অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত আটটা। সুড়ঙ্গের আঁধার থেকে উদ্ধারকারীদের তৎপরতায় আলোর জগতে ফিরে এলেন আটকে পড়া শ্রমিকরা। গোটা দেশের সঙ্গে খুশির ঝিলিক বইছে কোচবিহারের ‘চেকাডরা গেরগেন্দারপাড়’ গ্রামের তালুকদার পরিবারেও। গ্রামজুড়ে উঠছে খুশির রোল। রাত আটটার দিকে উদ্ধারকারীরা মাত্র ৩৮ মিনিট ২১ সেকেন্ডেই সকলকে সুড়ঙ্গ থেকে একে একে বাইরে বার করে নিয়ে আসেন। উদ্ধার হওয়া মানিক তালুকদারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে পরিবার। ঘরের লোকের গলার আওয়াজ শুনে স্ত্রী সোমা তালুকদারের চোখে তখন জলের ধারা। আনন্দে কেঁদে উঠলেন পুত্র মনি তালুকদারও। গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছে তালুকদার বাড়িতে। আজ তাদের খুশির দিন। শুধুমাত্র শ্রমিক পরিবারেই আনন্দের ঢেউ ওঠেনি। গ্রামবাসীরা সকলেই ঘরের ছেলে মানিকের উদ্ধারের খবরে কার্যত দীপাবলিতে মাতলেন।
উল্লেখ্য, এর আগে আজ সকাল থেকেই উদ্ধার হওয়ার একটা আশা জেগেছিল। কিন্তু না বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন সময় ব্রেকিং নিউজের সংবাদের চিত্র পাল্টে যাচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবেই মানিকের পরিবারের সঙ্গে গ্রামবাসীও আশা-নিরাশার দোলাচলে ছিলেন এদিন দিনভর। অবশেষে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত শুরু হতেই মিলল খুশির খবর। ফোনের ওপার থেকে শোনা গেল ঘরের ছেলে মানিকের কন্ঠস্বর। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন সকলেই।
অন্যদিকে, এদিন তুফানগঞ্জের বলরামপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চেকাডরা গেরগেন্দারপাড় এলাকায় মানিক তালুকদারের বাড়িতে যান উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। তিনি বলেন, ‘এদের পরিবারের লোকদের মতো গোটা কোচবিহার জেলার মানুষ উৎকণ্ঠায় ছিল। গোটা বাংলার মানুষ উৎকন্ঠায় ছিল। সকলেরই একটাই চিন্তা ছিল, এই মানুষগুলো কবে উদ্ধার হয়।