পারিজাত মোল্লা: ফের কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি বেআইনিভাবে লিপস এন্ড বাউন্ডসের অফিসে হানা দিয়েছে। এই অভিযোগেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডির দায়ের করা এফআইআর খারিজের মামলা এটি। এমনকী যে ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে সেই বিষয়টিতেও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আদালতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অভিষেকের আইনজীবী। আদালতের হস্তক্ষেপের আবেদন করা হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্টে সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী বলেছেন, ‘মূল মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। রায়দান স্থগিত রয়েছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর রায়দান। তার মধ্যে একই ইসিআইআর সূত্র ধরে অনেক কিছু হচ্ছে। তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি’। তাই আবেদন এখনই মামলার শুনানি হোক। আবেদনের ভিত্তিতেই আগামীকাল শুক্রবার শুনানির দিন স্থির করা হয়েছে।
লিপস এন্ড বাউন্ডস সংস্থায় ইডি তল্লাশির ‘পঞ্চনামা’। সংস্থার হিসেব দেখভাল করেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে চলে তল্লাশি। একটা রেকর্ড রুম, দুটি কেবিন, একটি রান্নাঘর এবং রিসেপশনে চলে তল্লাশি। তখনই বাজেয়াপ্ত করা নথির মধ্যে পাওয়া যায় বেশ কিছু ফাইল। ব্যাংকের হিসেব, দলিল/ডিড, একটি হার্ডডিস্ক, একটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তবে উদ্ধার লিস্টে নেই ফাইল ডাউনলোডের কথা। গত বুধবার কলকাতা পুলিস লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
ইডি-র বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, ২১ থেকে ২২ অগাস্টের মধ্যে সংস্থার অফিসে ১৮ ঘণ্টার অভিযানে একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারে ১৬ টি এক্সেল ফাইল ডাউনলোড করে। দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরের ওই অফিস থেকে ইডির দল বেশ কিছু নথি ও হার্ড ডিস্কও বাজেয়াপ্ত করে।
এই অভিযানের পরে ইডি একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে বলে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সাংসদ, মেসার্স লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং এপ্রিল ২০১২ থেকে জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত সংস্থাটিতে পরিচালকও ছিলেন। ইডির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিক্ষা দফতরে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেই এই অভিযান চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার এই মামলায় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অভিষেকের আইনজীবী। তাঁর বক্তব্য, ইডির মামলা (ইসিআইআর) খারিজের জন্য যে আবেদন জানানো হয়েছিল, তা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলার রায় ঘোষণা হয়নি। তার আগে নতুন করে কি সমন পাঠানো যায়?’ আদালতে এই বিষয়টি দ্রুত শুনানির আর্জিও জানানো হয়েছে।
এই আবেদনের ভিত্তিতে এদিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান, ‘দু’টি মামলার যোগসূত্র দেখবে আদালত। সেটা দেখে সন্তুষ্ট হলে, তবেই মামলার শুনানি করা হবে। তা না হলে শুনানি হবে না’। আগামীকাল শুক্রবার এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। এদিকে, ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থায় তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। সেই নথির ভিত্তিতে বেশ কিছু পদক্ষেপও করা হয়েছে। ঠিক এখানেই অভিষেকের আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘একই ইসিআইআর-এর ভিত্তিতে কী নতুন পদক্ষেপ করা যায়? কারণ, অভিষেকের বিরুদ্ধে ইডির নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এখনও ওই মামলায় রায় ঘোষণা হয়নি। এর পরেও ইডি কেন এতটা সক্রিয়?’ সেই প্রশ্নই তুলেছেন অভিষেকের আইনজীবী। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসের দিকে তাকিয়ে অনেকেই।