আসিফ রেজা আনসারীঃ নবী মুহাম্মদ সা. কে মুসলিমরা প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। এটাই মুসলিমদের ঈমানী জজবা। তাই নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের মন্তব্যে মুসলিমরা তাঁদের ভাবাবেগে আঘাত পেয়ে আন্দোলন করছেন। তবে প্রতিবাদ হতে হবে শান্তির ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই। অশান্তি ইসলাম অনুমোদন দেয় না। রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর পেয়ে সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই বার্তা দিলেন রাজ্যের ইমামরা।
এ দিন বিকালে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন অল বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট ইমাম অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নিজামুদ্দিন বিশ্বাস-সহ বিভিন্ন জেলার পদাধিকারীগণ। ইমামদের সঙ্গে সহমত পোষণ করতে ও মুসলিম উম্মাহ্কে বার্তা দিতে আমন্ত্রিত ছিলেন পুবের কলম-এর সম্পাদক তথা সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, বৌদ্ধ ধর্মগুরু ড. অরুণজ্যোতি ভিক্ষু প্রমুখ।
পুবের কলম-এর সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নবী সা. সম্পর্কে নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের মন্তব্যে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা দুঃখিত হয়েছে। আমরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নূপুর শর্মাকে বিজেপি সাসপেন্ড করেছে তাতে সন্তুষ্ট নন আহমদ হাসান ইমরান।
তিনি বলেন, কড়া শাস্তি দিতে হবে। বিজেপি সরকার দোষীকে গ্রেফতার না করে উলটে প্রতিবাদকারীদের উপরেই বুলডোজার চালাচ্ছে। যোগী সরকারের এমন কাজের তিনি সমালোচনা করেন।অন্যদিকে প্রতিবাদকারী উদ্দেশ্যে ইমামদের হয়ে তাঁর বক্তব্য, প্রতিবাদ করতে হবে, তবে আমাদের মনে রাখতে হবে নবী মুহাম্মদ সা. শান্তির বার্তা দিয়েছেন।
তাঁর উপর যে কুরআন নাজিল হয়েছে তাতে স্পষ্ট বলা আছে, আল্লাহ ফাসাদ বা অশান্তি সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না। তাই আমাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক পথেই আন্দোলন করতে হবে। প্রশাসনকেও দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
অল্প বয়সে বিবাহের জন্য শুধু নবী সা. কে শুধু আক্রমণ করা হয়। এটা একটা বড় ধরণের চক্রান্ত বলেই মনে করেন ইমরান।তিনি তৎকালীন সামাজিক অবস্থান নিয়েই দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্যাসাগর বা ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র মতো মানুষরা অল্প বয়সে বিবাহ করেছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ইমামদের রাজ্য সম্পাদক নিজামুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, নবী সা. কে নিয়ে যেভাবে নোংরামি করা হয়েছে, আমরা তার নিন্দা জানাচ্ছি।আমরা, ইমামরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তবে আমাদের মনে হয়েছে, নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের পেছনে বড় মাথা রয়েছে।
তাদেরকেও খুঁজে বের করতে হবে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে অশান্তির তিনি নিন্দা করেন। তাঁর কথায়, নবী সা.কে ভালোবাসতে হলে নবীর পথেই আন্দোলন করতে হবে। দেশের সংবিধান ও আইন মেনেই প্রতিবাদ করা উচিৎ। তাঁরা ঠিক করেছেন সামনের বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রতিটি ব্লকের বিডিও ও পুর-এলাকায় সেখানকার চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করবেন।
বৌদ্ধ ধর্মগুরু ড. অরুণজ্যোতি ভিক্ষু বলেন, দেশের পরিস্থিতি পালটে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুসলিমদের উত্যক্ত করা হচ্ছে। আসলে একটি শক্তি মানুষের মধ্যে বিভাজন করে নিজেরা লাভবান হতে চাইছে। তিনি দাবি করেন, নূপুর শর্মাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। তাঁকে কড়া শাস্তি দিতে হবে, যাতে অন্যরা অন্যায় করার সাহস না পায়।
এ দিন অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাঁকুড়া জেলা ইমাম সেখ সরিফুল ইসলাম, বর্ধমানের জেলা ইমাম সেখ শামসুর রহমান, পূর্ব মেদিনীপুরের প্রতিনিধি সাহাদাত আলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জিয়াউল হক লস্কর, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা ইমাম পীর হাসানুজ্জামান, হাওড়ার আইয়ুব সাহেব প্রমুখ। সকলেই নূপুর শর্মাকে গ্রেফতার করার দাবি জানান। একইসঙ্গে নবী সা.-এর পথে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর কথা বলেন।