আবদুল ওদুদ: তীব্র বাক বিতণ্ডার মধ্যেই ১৬৭-৬২ ভোটে বিধানসভায় পাশ হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’প্রস্তাব। একই সঙ্গে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’-কে রাজ্য সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব এদিন বিধানসভায় পেশ হয়। ভোটাভুটিতে পাশ হয় সে প্রস্তাবও।
রাজ্য বিধানসভায় ‘™শ্চিমবঙ্গ দিবস’ প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর এক বিরল মুহূর্তের সাক্ষী থাকল উপস্থিত বিধায়করা। রাজ্য সংগীত হিসেবে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’- স্বীকৃতি পেতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিধানসভা গাওয়া হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এই গান। শুরুটা করে তৃণমূল বিধায়ক ও তথ্য সংßৃñতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। মাইক হাতে ইন্দ্রনীল গান ধরতেই নিজের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে কন্ঠ মেলাতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকেও। উপস্থিত অন্যান্য মন্ত্রী ও বিধায়কদেরও গানের তালে সুর মেলাতে দেখা যায়।
রাজ্য বিধানসভা অধিবেশনের শুরুতেই বৃহস্পতিবার ‘পশ্চিবমঙ্গ দিবসের’ দিন এবং রাজ্যসঙ্গীত নিয়ে প্রস্তাব পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল সিভি আন¨ বোসকে ফের আরও একবার হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বেতন বন্ধের হুশিয়ারি দিয়েছিলেন। ৪৮ ঘন্টা না ঘুরতে ফের আরও একবার তিনি হু¥শিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘রাজ্যপাল সই না করলে কী করে আটকায় দেখব। রাজ্যপালের শক্তি বেশি, না জনগণের শক্তি বেশি দেখে নেব। রাজ্যপাল সই না করলে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা’’। জনগনের রায়ে ১লা বৈশাখ ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ ও ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’কে রাজ্য সঙ্গীতের শিলমোহর পড়বে আশা মুখ্যমন্ত্রীর। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তাঁর আরও স্পষ্ট মন্তব্য, ‘‘আমরা মনে করি বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন ১লা বৈশাখকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কারণ, এটা শুভ দিন। আমি জানি, একটা রাজনৈতিক দল যাবে আজ রাজভবনে। সেখানে তাদের মিটিং আছে। তারা তো আগেই বলে দিলেন যাতে এই প্রস্তাব গৃহীত না হয়। কে সমর্থন করল আর করল না তাতে কিছু যায় আসে না । আমরা ১লা বৈশাখ পালন করব।’’
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি, তাঁরা ইতিহাস শেখাবে।’ ১৯৪৭ সালের ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ স্থাপিত হয়নি। অবিভক্ত বাংলার বিধানসভায় একবার এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। যাদের সঙ্গে বাংলার মানুষ, মাটির যোগাযোগ নেই, তারা কী করে বাংলার কথা বলবে?’
মুখ্যমন্ত্রীর এদিন বলেন, ‘‘এতদিন করা হয়নি দিবস পালন। কারণ, এতদিন শুনিনি বা সরকারি বিজ্ঞপ্তি হিসাবে আসেনি ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস। আমরা রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছিলাম। যাতে এই দিন পালিত না হয়। একটা রাজনৈতিক দল যদি তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়, আমরা চাপিয়ে দেওয়া সব মানব না। যে সব রাজ্যে দিবস পালন করা হয়, সেই সব রাজ্যে নোটিফিকেশন করে দিবস পালন করা হয়।’’
মমতা আরও বলেন, ‘বিধানসভা বা সরকার কিছু না করলে ভুল দিনটাই থেকে যাবে। বিরোধী দলনেতা বলেছেন, ‘পয়লা বৈশাখে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের প্রস্তাবে রাজ্যপালকে সই করতে দেবেন না। রাজ্যপাল সই না করলেও আমাদের কিছু যায় আসে না।’
১লা বৈশাখ পশ্চিমবঙ্গ দিবসের বিরোধিতা করে বিজেপি পরিষদীয় দলের তরফে প্রথম বক্তব্য রাখেন বিধায়ক শংকর ঘোষ। প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ২০ জুনের পক্ষে সওয়াল করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। ১৬ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের দাবি জানান আইএসএফের একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি।
প্রসঙ্গত, গত ২০ জুন রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু এই দিনটিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে মানতে নারাজ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথমে ফোনে অনুরোধ জানিয়ে ও পরে চিঠি লিখে রাজ্যপালকে এই আয়োজন থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় থেকে রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেন । বৃহস্পতিবার প্রত্যেক বিজেপি বিধায়কই ২০জুনের সপক্ষে একটি বিশেষ টি-শার্ট পরে উপস্থিত হয়েছিলেন বিধানসভায়। তা নিয়েই ক্ষোভপ্রকাশ করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিধানসভায়‘গেঞ্জি’ ইস্যু নিয়ে অধিবেশনের শুরুতেই শুরু হয় তরজা।স্পিকার বলেন, ‘‘গেঞ্জি পরে আসা ঠিক নয়।এটা করতে পারেন না।’’ পরিষদীয় রীতিনীতির প্রসঙ্গ তুলে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি বিধায়কদের অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন ‘গেঞ্জি’ না পরেন।
স্পিকারের এই মন্তব্যের পরেই হট্টগোল শুরু হয়ে যায় বিধানসভায়।রেগে গিয়ে স্পিকারকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনি দায়িত্বশীল নাগরিক ও বিধায়ক। আজ কি তাহলে গেঞ্জি কথা বলবে?’’ শাসকদলের বিধায়কের মধ্যে হাসির রোল ওঠে।
‘বাংলার মাটি বাংলার জল’। এদিন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচয়িত সেই গানের সুরেই মুখরিত হল বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ। গান শেষের পর তৃণমূল বিধায়করা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন।
এদিন বেলা তিনটের পর বিধানসভা থেকে বিজেপির বিধায়কদের নিয়ে রাজভবনে যান বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। পশ্চিমবঙ্গ দিবসের ফাইলে যাতে রাজ্যপাল না সই করেন তার আবেদন জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।