পারিজাত মোল্লা: রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দুটি মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। চূড়ান্ত শুনানির আগেই সরে দাঁড়ালেন তিনি। এই মামলাগুলি অযথা দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে বলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য।সেই মামলাতেই এবার সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি। মামলা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিচারপতি মান্থার।
কলকাতা হাইকোর্টে ৫৩ জন বিচারপতি থাকা সত্ত্বেও অন্য কোর্টের ছেড়ে দেওয়া মামলা কেন বারবার তাঁর এজলাসেই আসছে? তা নিয়ে বিরক্ত বিচারপতি। এর পাশাপাশি, রাজ্যও অনেক ক্ষেত্রে মামলা দীর্ঘায়িত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করে হেনস্থা করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে বিরোধী দলনেতার দুটি পৃথক মামলা করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে।
দুটি ক্ষেত্রেই বিচারপতি রাজশেখর মান্থার নির্দেশ দিয়েছিলেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নতুন কোনও এফআইআর করা যাবে না।
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এই মামলাগুলিতে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা যাবে না বলেও অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের সিঙ্গেল বেঞ্চ।রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, শুভেন্দু অধিকারীর মামলা অযথা দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে, যার ফলে সময় নষ্ট হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা ফের বিচারপতি মান্থার এজলাসে পাঠিয়ে দিয়েছিল। পাশাপাশি, দ্রুত শুনানির পরামর্শ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি মান্থার এদিন এজলাসে জানান , ‘কেন শুধু এই কোর্টে মামলা আসছে? অন্য যে কোনও কোর্ট কোনও মামলা থেকে সরে দাঁড়ালে, এই কোর্টেই কেন মামলা করা হচ্ছে? এখন তো ৫৩ জন বিচারপতি আছেন। যে কোনও কোর্ট এই মামলা শুনতে পারে। এই এজলাসে দীর্ঘ শুনানি করার সময় নেই।’ তবে শুধুমাত্র শুভেন্দু অধিকারীই এই মামলা দীর্ঘায়িত করছেন বলে মনে করেন না তিনি।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য যাই অভিযোগ জানাক না কেন, কোনও পক্ষই এই মামলা দ্রুত শুনানি করাতে আগ্রহী নয়। তাই এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি। প্রসঙ্গত, এর আগে এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ান বিচারপতি পার্থসারথী সেন। তখন প্রধান বিচারপতি সেই মামলাগুলো পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি মান্থার এজলাসে।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দু’টি মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। এই মামলাগুলির দ্রুত শুনানি হচ্ছে না বলে সুপ্রিম কোর্টে নালিশ করেছিল রাজ্য। কিন্তু শীর্ষ আদালত মামলায় কোনও হস্তক্ষেপ না করে হাইকোর্টকে দ্রুত শুনানির পরামর্শ দিয়েছিল।এদিন বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ, -‘ শীর্ষ আদালতে রাজ্যের আবেদন দেখে মনে হয়েছে, যেন মামলাকারীর জন্যই শুনানিতে দেরি হয়েছে।
কিন্তু এই আদালত দেখেছে যে কোনও পক্ষই দ্রুত শুনানিতে আগ্রহী নয়’। তিনি জানান , ”দীর্ঘ শুনানি করার সময় এই এজলাসের সময় নেই, আদালতে আরও ৫৩ জন বিচারপতি রয়েছেন। অন্য কোনও এজলাসে মামলা পাঠানো হোক।”,উল্লেখ্য, গত বছর ডিসেম্বরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার বেঞ্চ শুভেন্দুর বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের দায়ের করা ২৬টি এফআইআর-এ স্থগিতাদেশ দেয়।
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নতুন মামলা করতে গেলেও আদালতের অনুমতি নিতে হবে বলে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের অন্য বিচারপতির কাছে আর্জি জানিয়ে সুরাহা না-পেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। এর পরিপেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ জানায়, -‘রাজ্য সরকারকে আগের নির্দেশে রদবদলের জন্য কলকাতা হাইকোর্টেই আবেদন জানাতে হবে’। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার স্বতঃস্ফূর্তভাবেই শুভেন্দুর দুটি মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন।