পারিজাত মোল্লা: কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এর এজলাসে উঠে এক চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা। এদিন বিচারপতির তোপের মুখে পড়ে রাজ্য পুলিশ। চিকিত্সক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললো সিঙ্গেল বেঞ্চ। এদিন এজলাসে সওয়াল-জবাব পর্বে বিচারপতি জানান ‘চিকিত্সক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়’!
এদিন মামলার শুনানিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, ‘যদি গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে মৃত চিকিত্সকের দেহে ১৪টি ক্ষত কিসের? ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এই বিষয়ে চিকিত্সক আলাদা করে কোনও উল্লেখ করলেন না কেন?’নিহত চিকিত্সক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসএসকেএমের চিকিত্সকদের দিয়ে দেখিয়ে দ্বিতীয় মতামত নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
নিহত চিকিত্সকের পরিবারের আইনজীবী এদিন সিঙ্গেল বেঞ্চে অভিযোগ জানিয়ে বলে , -‘ মেয়ের মৃত্যুর পরও পুলিশ মায়ের কোনও জবানবন্দি নথিভুক্ত করেনি’। বিষয়টি জানতে পেরে ফের পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় বিচারপতিকে। এখনই মৃতের মায়ের সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশ দেন বিচারপতি সেনগুপ্ত ।বিচারপতি বলেন, ‘কী করে এই ক্ষত হয়েছে সেটা জানা জরুরি। অরিজিনাল পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও কেস ডাইরি দেখা দরকার। তদন্তকারী অফিসার কেন পরিবারের ভিডিয়োগ্রাফি করেননি, সেটাও দেখতে হবে।’
আদালত সুত্রে প্রকাশ, চলতি বছরের গত ১৯ জুন ব্যারাকপুর সেনা ছাউনির অফিসার্স কোয়ার্টার্স ম্যান্ডেলা হাউসের ২০ নম্বর ফ্ল্যাটের একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয় চিকিত্সক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের ঝুলন্ত দেহ। ওই ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে লেখা, ‘যে প্রহারের দাগ নিয়ে চলে গেলাম/ এর শোধ কেউ নেবে/ আমার মৃত্যুর জন্য কৌশিক দায়ী।’পরিবার সূত্রের খবর, সেনাবাহিনীর চিকিত্সক কৌশিক সর্বাধিকারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রজ্ঞাদীপার। তাঁরা একসঙ্গে লিভ ইনে থাকতেন। ঘটনার পর পুলিশ কৌশিককে হেফাজতেও নেয়। পরে জামিনে মুক্তি পান কৌশিক।
নিহত চিকিত্সকের পরিবারের দাবি, ‘অভিযুক্ত নিজেও একজন চিকিত্সক। তিনি ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সককে ফোন করে ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। সেই তথ্য প্রমাণ রয়েছে। এমনকি ঘটনাস্থলে মৃত চিকিত্সকের দেহের ভিডিও রেকর্ডিং পুলিশ করলেও সেসব তদন্তে সামনে আনা হচ্ছে না।’ আগামী ২১ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে পুলিশকে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।