এস জে আব্বাস , সফিকুল ইসলাম (দুলাল)
মজবুত করতে হবে দেশের গণতন্ত্র।এই গণতন্ত্র মজবুত করতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন সংবাদ মাধ্যম। তবে আজকের দিনে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকাও প্রশ্নাতীত নয়।যেদেশের সংবাদ মাধ্যম যত বলিষ্ঠ সেদেশের গণতন্ত্র তত মজবুত।সংবাদ মাধ্যমের বিকিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে সমাজ, দেশ তথা রাষ্ট্রকে পথভ্রষ্ট করার ছক চলছে।মূলত সমসাময়িককালের এই বাস্তব বিষয়গুলিকে সামনে রেখেই রবিবার বর্ধমানে ছিল সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। সংবাদ মাধ্যম ও কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির উদ্যোগে বর্ধমান টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
এদিনের কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি শাহিদুল্লাহ মুন্সী, দৈনিক পূবের কলম পত্রিকার সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, এজিপি (কলকাতা হাইকোর্ট) আনসার মন্ডল,জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য্য, বিধায়ক অলোক মাঝি, বর্ধমান পৌরসভার উপ প্রশাসক আইনুল হক, দৈনিক স্টেটসম্যান এর সম্পাদক শেখর সেনগুপ্ত, আইজেএ -র সম্পাদক দেবাশিস দাস, বর্ধমান সহযোদ্ধার সম্পাদক প্রীতিলতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য অপার্থিব ইসলাম, বিশ্বনাথ রায় প্রমুখ।
বক্তারা প্রত্যেকেই মূল্যবান ভাষণ দেন। উদ্বোধক শহিদুল্লাহ মুন্সী বলেন, সংবাদ মাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সাংবাদিকদের কাজ করতে দিতে হবে স্বাধীনভাবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ না করতে পারলে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হবে।
এ প্রসঙ্গে পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান সমসাময়িককালে মিডিয়ার ভূমিকা, তাদের দায়িত্ব ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে মূল্যবান ভাষণ দেন। এই ধরনের সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা আরও বহু জায়গায় হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন। মালদা , বোলপুর সহ অন্য জায়গায় এই ধরণের সাংবাদিক প্রশিক্ষণ শিবির হওয়ার প্রয়োজনীয়তার দিকে তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । ইমরান বলেন পৃথিবী আজ গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে।বিশ্ব নাগরিক আমরা। আমরা আর ‘থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে … দেখবো এবার জগৎটাকে।’ তাই, বিশ্বের খবরকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে ভারতে যে প্রিন্ট মিডিয়ার চাহিদা কমেনি সেকথার উল্লেখ করেন তিনি। ইমরান বলেন, নিরপেক্ষ নির্ভীক সংবাদ তুলে ধরার কথা বলা যেমন সহজ,তেমনি তা পালন করা বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই কঠিন। কারণ কর্পোরেট মালিকরা তাদের স্বার্থের জন্য সংবাদমাধ্যমকে নিজেদের মতো করে চালিত করে। তবুও সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়া চলবে না।
তিনি সংবাদ জগতে মহিলাদেরকেও এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করেন।আহমদ হাসান ইমরান তাঁর দীর্ঘ ৪০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের কথা তুলে ধরেন। তাঁর হাত ধরেই সাপ্তাহিক কলম দৈনিকে রূপান্তরিত হয়। একসময় তিনি রেডিও তেহরান এবং বাংলাদেশের নামি দৈনিকে নিজের সাংবাদিকতার মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন।
ওয়ায়েজুল হক জানান, কাজের সমালোচনা করতে হয়, তবেই কাজের মধ্যে স্পৃহা বাড়বে। তবে আজকাল আমরা পেইড নিউজ দেখে মর্মাহত হয়। এমন অনেক সংবাদ দেখা যায় যেটা লিড নিউজ হওয়ার কথা ছিল, তা চলে যায় ভেতরের পাতায় ছোট্ট করে।আমার বিশ্বাস সংবাদমাধ্যম কখনো বিকিয়ে যেতে পারেনা।সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ মানুষকে জাগ্রত রাখে তাই সঠিক সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সাংবাদিকদের।
সাংবাদিকদের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আনসার মন্ডল বলেন, দশটি মিটিংয়ে যে লোক হয়,তার থেকেও বেশি জনমানুষের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির ক্ষমতা রয়েছে একজন সাংবাদিকের। শেখর সেনগুপ্ত জানান,সংবাদমাধ্যমের আদর্শের কথা । সমাজকে কলুষমুক্ত করে মানুষ হিসেবে মানুষের দায়বদ্ধতাকে প্রতিষ্ঠা করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। তিনি বর্তমান ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার যুগে প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে যে যে আশঙ্কার মেঘ তৈরি হয়েছে তা নস্যাৎ করে জানান,প্রিন্ট মিডিয়া অবশ্যই টিকে থাকবে।
অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা মোল্লা জসিম উদ্দিন জানান, আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন উৎসাহী সাংবাদিক শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা চাই, এরাও গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করুক। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন, জগন্নাথ ভৌমিক ও সফিকুল ইসলাম।