- নুরুল ইসলাম খাঁন
- রাকিবুল আলম শেখঃ
দাদা হুজুর আবু বকর সিদ্দিকী-র (রহ.) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জমিয়তে উলামায়ে বাংলা পেরিয়ে এল একশত বছর। রবিবার ফুরফুরার ফুটবল মাঠে পীর ইমরান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে পালিত হল জমিয়তে উলামায়ে বাংলার শতবর্ষপূর্তি। আর এতে উপস্থিত ছিলেন ফুরফুরা শরীফের দুই পীর আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও পীর ইমরানউদ্দিন সিদ্দিকী। ছিলেন পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী, সৈয়দ বাহাউদ্দিন, অনুষ্ঠান পরিচালনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন। এই অনুষ্ঠানে ফুরফুরা শরীফের বেশিভাগ পীরজাদা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. নুরুস সালাম, সাবেক সাংসদ ও পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিত দে, বেলুড় মঠের মহারাজ স্বামী বেদাতিতানন্দ, সমাজকর্মী কুতুবউদ্দীন তরফদার, হাফেজ আবদুল আজিজ প্রমুখ।
প্রথমে ও শেষে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে বাংলার বর্তমান সভাপতি পীর ইমরানউদ্দিন সিদ্দিকী। দাদা হুজুরের সময় থেকে জমিয়তে উলামায়ে বাংলার অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমাদের দাদা হুজরের শিক্ষা ও ঐতিহ্যকে নিয়ে পথ চলতে হবে। তিনি উপস্থিত সকল শ্রোতা-দর্শককে ফুরফুরা শরীফের এই অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠান শেষে দোয়াও পরিচালনা করেন ইমরানউদ্দিন সিদ্দিকী। তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, জমিয়তে উলামায়ে বাংলার শতবর্ষের এই অনুষ্ঠানই শেষ নয়। বরং এই অনুষ্ঠান আমাদেরকে আরও কর্মযজ্ঞের দিকে উৎসাহিত করছে। জমিয়তের কাজ ও আদর্শকে আরও সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য আমরা ঐতিহাসিক শহীদ মিনারে শীঘ্রই এক বিরাট সমাবেশ করব। শহীদ মিনারের সমাবেশের লক্ষ্যে ইমরানউদ্দিন সিদ্দিকীর ঘোষণাকে উপস্থিত মানুষরা ব্যাপকভাবে স্বাগত জানান।
সংগঠনের সহ সভাপতি সৈয়দ বাহাউদ্দিন বলেন, দাদা হুজুর আবু বকর সিদ্দিকী (রহ:) মনে করতেন প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই কুসংস্কার দূরীকরণ সম্ভব। তিনি বুঝেছিলেন বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাও সমাজের অগ্রগতিতে ভূমিকা নেবে।তাই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্কুলও তৈরি করেছিলেন। দাদা হুজুর আমাদের মধ্যে না থাকলেও তাঁর দেখানো পথকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর প্রতিষ্ঠা করা জমিয়তে উলামায়ে বাংলা আজও আমাদেরকে পথ দেখিয়ে চলেছে।
আহমদ হাসান ইমরান সমাবেশকে সম্বোধন করে বলেন, দাদা হুজুর আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) যে বিভিন্নমুখী কাজ করে গেছেন। সমাজে পরিবর্তন এনেছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজের মধ্যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, নারী শিক্ষায় উৎসাহিত করেছেন, মদ-জুয়া থেকে মানুষকে মুসলিম জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে এনেছেন, হালাল ও হারাম অর্থ ও খাদ্যের মধ্যে অনুসারিদের ফারাক করতে বলেছেন, শির্ক ও বিদয়াত দূর করেছেন তা মুজাদ্দিদরাই করে থাকেন। তাই তিনি ছিলেন যুগের মুজাদ্দিদ, বাংলার মুজাদ্দিদ।ইমরান বলেন, বর্তমানে আবার দেশের পরিস্থিতি খুব উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। তাই আমাদের পুনরায় দাদা হুজুরের গৃহীত কাজগুলি আনজাম্ দিতে হবে, তার প্রসার করতে হবে।
ইমরান আরও বলেন, আজকের এই সভা কলকাতায় অনুষ্ঠিত করার জন্য জমিয়তে উলামায়ে বাংলা যে দিনক্ষণ ও স্থান নির্দিষ্ট করেছিলেন, তা কোন স্থগিত করতে হল তা হয়তো পরে জানা যাবে। ইমরান বলেন, এই সভায় আমি নতুন যে বিষয়টি জানতে পারলাম তাহল, দাদা হুজুর বাংলা ভাষায় ওয়াজ-নসিহত, বই-পুস্তক লেখা ও ইসলাম প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। নইলে ফতোয়া এসেছিল, বাংলায় ইসলামে কথা বলা যাবে না।
পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী বলেন, আবু বকর সিদ্দিকী (রহ:) একজন প্রকৃত অভিভাবক হিসাবে এ সমাজের কল্যাণের জন্য ভালো অনেক কিছু করে গেছেন। তিনি একতা তৈরি করে সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের প্রতিষ্ঠা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু আজ আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। কে বড় তা প্রমাণ করার প্রতিযোগিতা চলছে। এইসব থেকে বের হয়ে এসে আমাদেরকে একতাবদ্ধ হয়ে সমাজের জন্য ভালো কাজ করতে হবে। সমস্ত উলামা ও পীরসাহেবদের এক করতে হবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দাদা হুজুরের মতাদর্শে গড়া শতবর্ষের জমিয়তে উলামার মূল উদ্দেশ্য হল, উপমহাদেশের সমস্ত শিক্ষিত ও আলেমদের ঐক্যবদ্ধ করে সুসংগঠিত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আমরা সে কাজেরই শপথ নিয়ে এগিয়ে যাব।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও ইতিহাসবিদ অমিত দে-র কথায় উঠে আসে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে দাদা হুজুরের সক্রিয়তার কথা। হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতির সেতু নির্মাণ করেছিলেন দাদা হুজুর। সারদা আইনের মতো একাধিক নতুন আইন তৈরি করে উপমহাদেশের শান্তি প্রিয় মানুষকে বিভক্ত করার নীতির বিরুদ্ধে দাদা হুজুর কাগজে-কলমে, সভা-সমিতি ও ধর্মীয় সভার মাধ্যমে অখণ্ড বাংলার মানুষকে এক ছাতার তলায় এনে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিলেন। অমিত দে আরও বলেন, বাংলা ভাষায় ইসলাম প্রচারের ঐতিহ্যকেও দাদা হুজুর আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
এই সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পীরজাদা সওবান সিদ্দিকী প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন পীরজাদা জিয়াউদ্দিন সিদ্দিকী, পীরজাদা মিনহাজ সিদ্দিকী, পীরজাদা মুজাহিদ সিদ্দিকী ও পীরজাদা সাফেরি সিদ্দিকী, পীরজাদা শাহিম, পীরজাদা তামিম সিদ্দিকী, পীরজাদা উজায়ের সিদ্দিকী, আজমাতুললাহ সিদ্দিকী ও পীরজাদা সানাউল্লাহ সিদ্দিকী। এদিন সভায় ‘শতবর্ষে আলোর দিশারি’ নামে একটি স্মরনিকা প্রকাশ ও ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয়।