পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া (জেএমআই) বিশ্ববিদ্যালয় স্কলার ও প্রতিবাদী কর্মী সাফুরা জারগারের ভর্তি বাতিল করল। তার গবেষণামূলক কাজ ‘অসন্তোষজনক’ আখ্যা দিয়ে সাফুরার ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফুরা জারগার এমফিল/ পিএসডি বিভাগে তার নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। ভর্তি বাতিলের ব্যাপারে সাফুরা জানিয়েছেন, জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্দেশ তার মন ভেঙে দিলেও তার আত্মাকে ভাঙতে পারেনি।
গত ২৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের ডিন-এর বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, সাফুরা জারগার এমফিলের সর্বোচ্চ পাঁচটি সেমিস্টারের গবেষণাপত্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দেননি। সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা বিভাগের বোর্ড অফ স্টাডিজ দ্বারা অনুমোদিত হওয়ার পরে, গত ২২ আগস্ট সাফুরা জারগারের নাম এমফিল/পিএইচডি থেকে বাদ দেওয়া হয়।গত ৫ জুলাই রিসার্চ অ্যাডভাইজরি কমিটির (আরএসি) দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ডিনের কার্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার রির্সাস কাজ অসন্তোষজনক। সাফুরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মহিলা স্কলার হিসেবে তিনি তার গবেষণা পত্র পেশ করেননি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, কোভিডের কারণে থিসিস জমা দেওয়ার অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছিল ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তিনি সেই সময়ের মধ্যেও পেপার জমা দেননি।সাফুরা জারগার একটি ট্যুইট করে জানিয়েছেন, কিভাবে তার ভর্তির অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত বাতিল করা হয়েছে। জারগার ট্যুইটে লেখেন, ‘জামিয়া কর্তৃপক্ষ সমস্ত প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য করে আমার ভর্তি বাতিল করতে শামুকের গতিতে চলছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্দেশে তার মন ভেঙে দিলেও তার আত্মাকে ভাঙতে পারেনি’।
গত সপ্তাহেই সাফুরা জারগার একটি ট্যুইট করে লেখেন, যে এমফিল থিসিস জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর জন্য তার আবেদন আট মাসেরও বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়েছে। সাফুরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ভর্তির ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বুধবার, তিনি জামিয়ার ভাইস চ্যান্সেলর নাজমা আখতারকে লিখেছিলেন যে প্রশাসনের হাতে তাকে অযথা হয়রানি ও উপহাসের শিকার করা হচ্ছে। যদিও ইউজিসি পরপর পাঁচটি কোভিড এক্সটেনশন মঞ্জুর করেছে আমাকে শুধুমাত্র একটি দেওয়া হয়েছে। আমাকে মহিলা স্কলার বিভাগের অধীনে একটি এক্সটেনশনের জন্য আবেদন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। শুধুমাত্র ‘অসন্তোষজনক অগ্রগতি’ উল্লেখ করে কয়েক মাস পরে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। এটি ইউজিসি দ্বারা নির্ধারিত নির্দেশিকাগুলির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এর ধরনের ঘটনার জন্য আমি যেটা মনে করেছি, সেই নিয়ে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেব। সাফুরা দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিবৃতি অনুযায়ী ৬ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া কোভিড এক্সটেনশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তার গবেষণাপত্রটি সম্পূর্ণ করেননি এবং ইউজিসি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কোনও কোভিড এক্সটেনশনের বিধান নেই।
উল্লেখ্য, সিএএ আন্দোলনের অন্যতম কর্মী জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার রিসার্চ স্কলার সাফুরা জারগারকে ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। সিএএ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনে দিল্লি পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা রুজু করা হয়। এর পর তিহাড় জেলে জামিনের আবেদন করলে তার তিন বার সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায় দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে। সেই সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সাফুরা। আদালত সেই সময় যুক্তি খাড়া করে, তিহাড় জেলেই গত বছরে ৩৯ জনের প্রসব হয়েছে। ফলে অন্তঃসত্ত্বা হলেই তিনি জামিন পাবেন এমন কিছু নেই। পরে জামিয়ার গবেষক সাফুর জারগারকে জামিনে মুক্তি দেয় আদালত।