আহমদ হাসান ইমরান: ইসরাইলে এসে গেছে লাল গরু। আর এই লাল গরু নিয়ে উগ্রবাদী ইহুদি এবং বাইবেল অনুসারী খ্রিস্টানদের একটি মহল খুবই উত্তেজিত এবং সেইসঙ্গে আনন্দিত। আর অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অধিবাসী এবং মুসলিম বিশ্বের নাগরিকরা মনে করছেন, এই ‘লাল গরু’ গাজা যুদ্ধ ও ইসরাইলি গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে আরও বেশি করে পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা তৈরি করছে।
কারণ, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের একটি বড় অংশ বিশ্বাস করে বাইবেল ও ইহুদি ধর্মগ্রন্থে লেখা রয়েছে ‘লাল গরুকে জেরুসালেমের একটি বেদিতে বলি দিলে ইহুদিদের সলমনের তৃতীয় মন্দির তৈরির কাজটি ত্বরান্বিত হবে। আর এই সলমনের এই মন্দির তৈরি হবে ইসলামের তৃতীয় পবিত্র মসজিদ আল-আকসাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে।’ তাই ইসরাইলে লাল গরুর আমদানি এক বড় ধরনের উত্তেজনার কারণ হয়ে উঠেছে।
কারণ, মুসলিমরা পবিত্র মসজিদুল আক্সাকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে, ইসরাইলে ‘লাল গরু’ জন্ম না নিলেও উগ্রবাদী ইহুদিরা কয়েকটি লাল গরু নিয়ে এসেছে তাদের রক্ষক ও মিত্র দেশ আমেরিকার টেকসাস থেকে। তা এখন রাখা রয়েছে ইহুদি কবলিত একটি খামারে। অপেক্ষা শুধু এই লাল গরুগুলিকে বলি প্রদানের। এজন্য ইহুদিরা বিভিন্ন সময় ঘোষণা করছে। কখনও বলা হচ্ছে এপ্রিল মাসেই লাল গরু বলি দেওয়ার পর ইহুদিদের সলমনের তৃতীয় মন্দির নির্মাণ এবং আল-আক্সা মসজিদ ধ্বংস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হবে। আবার বলা হচ্ছে, এই দিনক্ষণ একটু পেছানো হতে পারে।
আর এই লাল গরু বলি দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু নিয়ম-কানুনও রয়েছে। যেমন এই লাল গরুর কোথাও যেন কোনও দাগ বা জখম না থাকে। আর লাল রঙের ক্ষেত্রেও যেন গরুর গায়ে অন্য কোনও রং না থাকে। গরুকে হতে হবে স্বাস্থ্যবান হৃষ্টপুষ্ট।
কিন্তু ইহুদিদের লাল গরু বলি দেওয়ার প্রথাটি বেশ নৃশংস। যখন লাল গরু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে যাচ্ছে তখন তার সমগ্র গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। আর আগুনে পুড়ে যে চর্বি মিশ্রিত ছাই পাওয়া যাবে তা নাকি খুবই পবিত্র! এই ছাই মেখে অনেক কার্যসিদ্ধি করা যাবে এ কথা ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ এবং খ্রিস্টানদের বাইবেলে নাকি লেখা রয়েছে! গরু বলি দেওয়ার এই পদ্ধতিতে ইসরাইলিদের জিগরিদোস্ত ভারতের নরেন্দ্র মোদি বা অমিত শাহ নিশ্চয়ই সমর্থন করবেন না। কিন্তু যেখানে বলি দেওয়া হবে ইসরাইলের দখলকৃত সেই জেরুসালেমে ভারত থেকে গোরক্ষক পাঠানো হয়তো বা সম্ভব হবে না! কারণ, উগ্রবাদী সশস্ত্র জায়নিস্টরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সর্বক্ষণ কড়া নজরদারির জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। গোরক্ষকরা এই ইহুদিদের লিঞ্চিং করতে সক্ষম হবে না বলেই বিশেষজ্ঞ মহলের অনুমান।
তাই যুদ্ধবাজ ইসরাইল আর একটি মিথ বা কল্পকাহিনির লাল গরুর বলিদানকে বাস্তবায়িত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু মাঝখানে একটি বড় বাধা রয়েছে। তা হল তাদের মিথ অনুযায়ী সলমনের নয়া মন্দির গড়ার জন্য মসজিদুল আক্সাকে ধ্বংস করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। ইসরাইলে লাল গরু নিয়ে আসার ঘোষণা আল-আকসা মসজিদকে নতুন করে আক্রমণ করার প্রস্তুতি বলে অনেকে মনে করছেন। ইতিমধ্যেই দেখা গেছে, ইসরাইলের জায়নবাদী সরকারের সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র ইহুদি স্বেচ্ছাসেবকরা মুসলিমদের আল-আক্সায় নামায পড়তে বাধা দিচ্ছে।
তাদের উপর লাঠি চার্জ ও রবার বুলেট চালাচ্ছে। তারা কোনও সহাবস্থানের পথে হাঁটতে রাজি নয়। তাদের লক্ষ্য মুসলিমদের পবিত্রতম তৃতীয় ধর্মস্থানকে ধ্বংস করে ফেলা। আর তার উপরই হবে সলমনের মন্দির। ইহুদিদের এই পদক্ষেপকে জঙ্গি কিছু খ্রিস্টান গোষ্ঠীও সমর্থন করে চলেছে। তাই এখন সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন, করে লাল গরু বলি দেওয়া হবে? করে এই গরুকে পুড়িয়ে তার দেহাবশেষ থেকে ছাই নিষ্কাশিত করা হবে?
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.21-PM.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM-1.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM.jpeg)