মাওলানা আবদুল মান্নান : আজ ২০শে রমযান। ইফতারির পর থেকেই পবিত্র মাসের শেষ দশক শুরু হবে। রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন, ‘এই দশকে রমযানের শেষদিন পর্যন্ত একটি বিশেষ ইবাদাত রয়েছে, সেটি হল ইতিকাফ।’
‘ইতিকাফ’ আরবি শব্দ। অর্থ হচ্ছে, বিচ্ছিন্ন হওয়া, নিবেদিত হওয়া, অবস্থান করা। শরীয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয় ২১শে রমযানের শুরু থেকে শেষ দশদিন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদাতের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। ইতিকাফ করা হল সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্।
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , ‘যখন (রমযানের) শেষ দশদিন আগমন করত, নবী করীম সা. পরিধানের কাপড় মজবুত করে বাঁধতেন, রাত জাগতেন, এবং পরিবারের লোকজনকেও জাগাতেন।’ (বুখারী)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ্ সা. রমযানের শেষ দশদিনে ইিতকাফে বসতেন’ (বুখারী)।হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন, ‘নবী করীম সা. রমযানের শেষ ১০ দিনে মসজিদে অবস্থান করে ইতিকাফে বসতেন, তাঁর ইন্তেকালের পরে উন্মুল মুমিনীনগণও এই আমল অব্যাহত রাখেন।’ (তিরমিযি)
২০ রমযানের পর থেকে নিয়ত-সহ সাংসারিক বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ২৪ ঘণ্টা মসজিদে অবস্থান করে, ইবাদাত-বন্দেগীতে কাটানোই হল ইতিকাফ। ইতিকাফের কম সময় হল একরাত্রি একদিন। অতিরিক্ত সময় নিজ ইচ্ছাধীন। বস্তুত শেষ দশ দিন ইতিকাফ করাই উত্তম। তাতে শবেকদর অবশ্যই পাওয়া যায়। ইতিকাফকারী ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিমিত্তে নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে তাঁর ইবাদাতে নিয়োজিত রাখবে এবং দুনিয়াদারী কাজকর্ম থেকে দূরে রাখবে। ‘ইতিকাফের অবস্থায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করা, হাদিস শরীফ পাঠ করা, ইলম্ শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া, রাসূলুল্লাহ্ সা. ও অন্যান্য নবীগণের সীরাত পাঠকরা ও ধর্মীয় গ্রন্থাদি লেখা সর্বোত্তম আমল।
মহিলাদের জন্য স্বামীর অনুমতি নিয়ে ইতিকাফ করা জায়েয। অনুমতি দেওয়ার পর স্বামী তাকে নিষেধ করতে পারবে না। তবে মহিলাদের জন্য মসজিদ নয়, বাড়ির নিভৃত স্থানে ইতিকাফ করা বৈধ।’ (বুখারী)। নফল ইতিকাফের কোনও সময়সীমা নেই। অর্ধদিন এমনকি কয়েক ঘণ্টার জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। ব্যস্ততা উপেক্ষা করে যারা ইতিকাফ করে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার।