সেখ কুতুবউদ্দিন: কুরআন-হাদিশ-সহ নবী সা.-এর জীবন ও আদর্শ নিয়ে হামেশাই আলোচনা হয়। কিন্তু দৈনন্দিন যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলোচনা হয় খুব কমই।
আধুনিক যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নবী সা.-এর আদর্শ কীভাবে মানব জীবনে কার্যকর সম্ভব, তা নির্ধারিত আঙ্গিকে আলোচনার প্রয়োজন।
সেই আলোচনা নিয়মিতভাবে প্রতিবছর করে থাকে ‘পুবের কলম’ আয়োজিত নবী দিবসের। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষরা ‘পুবের কলম’-এর নবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা শুনতে আসেন। শনিবারও তার ব্যতিক্রম হল না।
এ দিন দুপুর আড়াইটায় আলোচনাসভা শুরু হওয়ার কথা ছিল। আর দু’টো বাজতে না বাজতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মানুষরা আসতে শুরু করেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেউ সুদূর মুর্শিদাবাদ থেকে, আবার কেউ নদিয়া, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম, মালদা, কলকাতা-সহ একাধিক জেলা থেকে হাজির হন। নবী সা.-এর জীবন ও আদর্শ কীভাবে মানব জীবনের মধ্যে কার্যকর করা সম্ভব। সেই বার্তা শুনতে অধীর আগ্রহে ইন্ডিয়ান সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাঘরে বসেছিলেন শ্রোতা-দর্শকরা।
ভিন্ন ধর্মের চোখে নবী সা.-এর জীবনাদর্শ সম্পর্কেও অনেকের জানার আগ্রহ ছিল। একের পর এক বক্তা নবী সা.-এর আদর্শ সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন।
এ দিনের আলোচনা চক্রে এসে মুর্শিদাবাদের ভাবতার প্রাক্তন আধিকারিক মুহাম্মদ মুস্তাকিমের প্রতিক্রিয়া ছিল, নবী সা.-কে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ সম্পর্কে ‘পুবের কলম’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে আগে থেকেই এই অনুষ্ঠানে আসার মনস্থির করি। সকালেই কলকাতায় এসে পৌঁছেছি। নবী সা.-এর জীবন ও আদর্শ নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন। এই আলোচনা শুনে অভিভূত হয়েছি। এই ধরনের আলোচনাসভা জেলায় জেলায় হওয়া জরুরি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির আবদুস সালামও এই ধরনের অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লে’ করেন। হাওড়ার বাঁকড়ার মতিয়ার রহমান মল্লিক, সামসুদ্দিন সে’ বলেন, আমরা ব্যবসায়ী। ব্যবসার চাপ সত্ত্বেও আলোচনা শুনতে এসেছি। প্রতি বছরই এই আলোচনায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি।
কলকাতার পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা এবং কৃষি দফতরের আধিকারিক একেএম মিরাজুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের প্রোগ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। ইদানীং এই চর্চা হারিয়ে যাচ্ছে। এই চর্চা ‘ইয়ং জেনারেশন’-এর মধ্যে খুব জরুরি।
নদিয়া থেকে এসেছিলেন অধ্যাপক কুতুবউদ্দিন বিশ্বাস, আলিয়ার আরবি বিষয়ের ছাত্র মুহাম্মদ সেলিম, ঘুটিয়ারি শরীফের নুরুল লস্কর, মঞ্জু লস্কর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুহাম্মদ আল আমীন (রিপু) প্রমু’। তাঁদের বক্তব্য, দ্বীন ও দুনিয়া খুবই জরুরি। দ্বীনের জন্য পড়াশোনাও প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষিতের উপর ধর্ম তুলে ধরতে হবে। সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে আলোচনা করলে বিভেদ দূর হবে। তা না হলে জানা অসম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সম্পাদক রহিমা খাতুন, হাওড়ার সমাজসেবী মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, যেভাবে নবী দিবস বা নবী সা.-এর জন্মদিন পালন হচ্ছে, তা একেবারে হাস্যকর। নবী দিবস পালন ‘অন্যদিকে’ চলে যাচ্ছে।
তাই নবী সা.-এর প্রকৃত জীবন ও আদর্শ মানুষের সামনে বেশি বেশি তুলে ধরা জরুরি। শুধু কলকাতায় কয়েকটি প্রোগ্রাম করলে হবে না। প্রতিটি জেলায় নবী সা.-এর আদর্শ নিয়ে আলোচনাসভার প্রয়োজন রয়েছে।