বিশেষ প্রতিবেদন: ফিলিস্তিনে জমিন দখল ও আরবদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন ইসরাইলের জন্য বৈধতা পেয়ে গেছে সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই। আরব ভূখণ্ডে উড়ে এসে জুড়ে বসার পর বসতি বাড়িয়ে চলেছে যাযাবর ইহুদি সম্প্রদায়। অবশ্যই আমেরিকা ও ব্রিটেনের সামরিক মদদ পেয়ে। সেই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিন এখন খোলা আকাশের নিচে জেলখানা। জমি কেড়ে নিয়ে ক্রমশই কোণঠাসা করে শরণার্থী শিবিরে জীবন-যাপন করতে বাধ্য করা হয়েছে এখানকার ভূমিপুত্রদের।
ইসরাইলের লক্ষ্য, ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ আল আকসার দখল। আর সেই মসজিদে আঘাত দেখে সক্রিয় হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনিদের আবেগ ও ঈমানের ফল্গুধারা। ইসরাইলি সেনাদের বাধা দিতে গিয়ে নির্ভয়ে প্রাণ উৎসর্গ করতে এগিয়ে এসেছে তারা। ফিলিস্তিনের ইতিহাসে এমন কোনও সপ্তাহ নেই যেদিন নিরীহ আরবদের রক্তে রঞ্জিত হয়নি জেরুসালেমের পবিত্রভূমি। বিশ্বনেতারা এইসব জানেন। দায়সারা ভাবে প্রতিবাদ জানান। হম্বিতম্বি শুরু হয়, বৈঠক হয়, চুক্তি হয়, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের রক্তঝরা বন্ধ হয়নি। আর না বন্ধ থেকেছে ইহুদিদের বসতি সম্প্রসারণ।
আরবদের মাঠের ফসল নষ্ট করে দেওয়া হয়, দামি জয়তুন গাছ কেটে দেওয়া হবে, বাইরে বের হতে হলে ইসরাইলের পাহারাদারদের সামনে দিয়ে যেতে হয়। বায়তুল মুকাদ্দাসে সেনাদের দাপট মেনে নিতে হয়। এই অবস্থা চলছেই। ফিলিস্তিনকে বিদ্যুত নিতে হবে ইসরাইল থেকে। নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাবার অনুমতি নেই। নোনাপানি ফিল্টার করে সরবরাহ হবে ইসরাইল থেকে। দান-খয়রাতের গাড়ি ও ট্রাক ফিলিস্তিনে প্রবেশ করবে ইসরাইলের অনুমতি নিয়ে, এই অমানবিক ব্যবস্থা বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হয়েছে ফিলিস্তিনিদের শুধু এই কারণেই যে, ফিলিস্তিনের প্রতি সক্রিয় সমর্থন জানাতে সাহস করে এগিয়ে আসেননি কোনও মুসলিম শাসকরা, যাদের উপর ঈমানি দায়িত্ব ছিল এই অত্যাচার-অবিচার নিয়ে সরব হওয়ার। একবার (১৯৬৭) ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ভয়ের পরিবেশের মধ্যে থাকতে হয়েছে আরব বিগ ব্রাদারদের।
তবে মিশরের প্রেসিডেন্ট মুরসির আমলে ইসরাইলকে চোখ রাঙিয়ে হুমকি দিতে দেখা গিয়েছিল, কিন্তু তারপর আমেরিকার চাপে আরব দুনিয়ার মানুষদের কাছে দুশমন নাম্বার ওয়ান যায়নবাদী ইসরাইলের সঙ্গে দোস্তির হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে এসেছে শক্তিশালী মুসলিম দেশগুলোর শাসকরা।
মিশর, জর্ডন, মরক্কো, বাহরাইন, আরব আমিরশাহী মিত্রতার চুক্তিতে আবদ্ধ ইসরাইলের সঙ্গে। সউদি আরবকেও চুক্তির টেবিলে টেনে আনা হয়েছিল। কিন্তু এই গাজা অবরুদ্ধ করে গণকবরের ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ায় সেই আব্রাহাম চুক্তি পিছিয়ে গেল।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এখন কড়া ভাষায় ইসরাইলের নিন্দা জানাচ্ছে। কিন্তু ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তিতে আবদ্ধ রয়েছে তুরস্ক।
এমনকি গাজা আক্রমণের এক সপ্তাহ আগে নিউ ইয়র্কে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করে তাঁকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণও দিয়েছিলেন তিনি। তাই দুর্দমনীয় ইসরাইলকে বিরত রাখতে এখন সব মুসলিম শাসকদের মুখে একটাই কথা—এগিয়ে আসুক আন্তর্জাতিক মহল। কিন্তু এই ‘আন্তর্জাতিক মহলটা’ যে কী বস্তু তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছে ফিলিস্তিনের জনগণ।
রাষ্ট্রসংঘ ব্যর্থ, ২২টি দেশের আরব লিগ ব্যর্থ, ৫৭টি দেশের ওআইসি ব্যর্থ, ৫৮টি দেশের রাবেতা ব্যর্থ, ৬টি দেশের জিসিসি ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ করতে। একটু একটু করে আরবদের জমি দখল করার পরিবর্তে এখন হামাসদের রকেট ছোঁড়া ইস্যুতে সব ফিলিস্তিনি জমিন একেবারেই জবরদখল করার কৌশল নিয়েছে যায়নবাদীরা। চলছে বর্বরতম অত্যাচার, পানি বন্ধ, বিদ্যুৎ বন্ধ, জ্বালানি বন্ধ, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ, বাসভবনের নিচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধার করা হলেও চিকিৎসা বন্ধ আর তার উপর ছড়ানো হচ্ছে মারাত্মক বিষাক্ত কেমিক্যাল। গাজাবাসীদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে মিছিল ও প্রার্থনা। কিন্তু অসহায় বিশ্ব দেখছে গণহত্যার মর্মান্তিক অধ্যায় আরবদের এক পবিত্র জমিনে! প্রতিবাদী হামাসদের খুঁজতে গিয়ে অসহায় সাধারণ ও নিরীহ নিরস্ত্র মানুষদের গণকবরের ব্যবস্থা করা হয়েছে!