পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ সুদ অর্থনীতি কেবল মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায়। তা আসলে আর্থিক ভিত্তিকে দুর্বল করে।সাধারণ মানুষের আমানতকারী হিসাবে আসলে সেকেন্ডারি ভূমিকা পালন করে ব্যাঙ্কগুলি। বিশ্বের তামাম ব্যাঙ্ক পুঁজিপতিদের হয়ে কাজ করে। তারা সুদের লোভ দেখায়।সাধারণ মানুষ লোভে এবং টাকা জমা রাখার একান্ত তাগিদে ব্যাঙ্কমুখী হয়।আম আদমির টাকা শিল্পপতিদের সুদের বিনিময়ে ঋণ দেওয়া হয়।সেই ঋণ প্রায়ই খেলাপ করেন শিল্পপতিরা।তাদের বিরুদ্ধে কার্যত সেইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।ফলে তাদের এই অন্যায়ের বোঝা পড়ে আম আদমির ওপর। শিল্পপতিরা, বড় ব্যাবসায়ীরা এবং ব্যাঙ্ক মিলিয়ে সুদযুক্ত এমন একটা আর্থিক কাঠামো নির্মাণ করেছে, যাতে প্রকৃত মানব কল্যাণের সম্ভাবনা ক্ষীণ। বরং অর্থনীতিকে দুর্বল করার প্রবণতা মারাত্মক।
ইসলামী অর্থনীতি বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় অর্থব্যবস্থা। মুসলিম দেশ ছাড়াও বহু অমুসলিম দেশ এই ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে। মুসলিম দেশের পাশাপাশি পৃথিবীর অনেক অমুসলিম দেশেও ইসলামী ব্যাংকিং চালু আছে। এ অর্থনীতি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তায় ভরা।
ইসলামী অর্থনীতি কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন ও সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
ইসলামী অর্থনীতিতে আসমান ও জমিনের সব সম্পদে সবার সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন ‘তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনঃসংযোগ করেন। অতঃপর সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৯)
ইসলামী অর্থনীতিতে বৈধ লেনদেন ও ইজারা ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জন ও রিজিক অনুসন্ধানের স্বাধীনতা আছে। বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদের যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই উপাসনা করে থাকো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)
মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তার প্রাপ্য দেবে এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।’ (সুরা : ইসরা, আয়াত : ২৬)
ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, ব্যক্তিগত কল্যাণের ওপর সামাজিক কল্যাণকে প্রাধান্য দেওয়া। তবে তা হতে হবে ন্যায় ও নীতির ভিত্তিতে। তাই জনসাধারণ চলাচলের জন্য রাস্তার জমিও ছাড় দিতে হয় এবং মানুষের চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে গুদামজাতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইসলামী অর্থনীতিতে সব ক্ষেত্রে সুদ হারাম করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া যা আছে তা ছেড়ে দাও—যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৯)
ইসলামী অর্থনীতিতে সর্বনিম্ন জীবিকার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। ইসলামে প্রত্যেকের সর্বনিম্ন জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই কেউ অক্ষম হলে তার দায়িত্ব ছেলে বা মা-বাবা বা স্বামী বা আত্মীয়-স্বজনকে গ্রহণ করতে হয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এবং তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৯)
ইসলামী অর্থনীতি সৎ চরিত্র দ্বারা বেষ্টিত। তাই একে অন্যকে ধোঁকা, প্রতারণা ও ক্ষতিসাধনের অনুমতি নেই। ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন , ‘যে ব্যক্তি আমাদের ওপর হাতিয়ার ওঠাবে সে আমার দলের নয়। আর যে প্রতারণা করবে সে আমার দলের নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০১)
‘হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)
ইসলামী অর্থনীতির স্তম্ভ তিনটি। এক. ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত মালিকানার স্বীকৃতি। দুই. ইসলামী শরিয়াহর আলোকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। তিন. ভারসাম্যতার মাধ্যমে সামাজিক ইনসাফ।
সারকথা হলো, ইসলামী অর্থনীতির সঙ্গে বিশ্বাস ও শরিয়তের বিধানের সম্পর্ক আছে। তবে ইসলামে ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত এবং নির্দিষ্ট সীমারেখায় স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ইসলামী অর্থনীতিতে কিছু মূলনীতি খেয়াল করতেই হয়।নীতিহীনতা দিয়ে আর যাই হোক মানব কল্যাণ হতে পারে না