পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে সাত দফায় অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। মঙ্গলবার ভোট গণনা। তার আগে সোমবার সাংবাদিক সম্মলন ভারতের নির্বাচন কমিশনার এক সাংবাদিক জানালেন, ভোটদানের নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ হল ভারত। এ দিন মুখ্যনির্বাচন কমিশনার জানান, সমগ্র দেশে মোট ৬৪.২০ কোটি ভোটার ভোট দান করেছেন। যা জি৭ দেশ গুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। মোট ভোটারের মধ্যে ৩১.২০ কোটি মহিলা তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে। বিশ্বের কোনও নির্বাচনে এত মহিলার ভোটদানের নজির নেই বলেই দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার। পাশাপাশি ৮৫ বছর বয়সী এবং বিশেষভাবে সক্ষম ভোটারদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে পরিসংখ্যানের পাশাপাশি ভোট কর্মীদের উল্লেখ করে তাঁদের নেপথ্য নায়ক বলে অভিনন্দিত করেছেন। তিনি জানান, “১.৫ কোটি পোলিং এবং নিরাপত্তাকর্মী কাজ করেছেন নির্বাচনে। এঁদের ছাড়া নির্বাচন সম্ভব হত না। এঁরা নেপথ্য নায়ক। নির্বাচনে ১৩৫টি বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছে। নজরদারি দল ছিল ৬৮ হাজারের বেশি। ১,৬৯২টি কপ্টার ব্যবহার হয়েছে।’’ রাজীব কুমার বলেন, ‘‘এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে ভোটকর্মীরা যান না। তবে এঁদের প্রশংসা কেউ করেন না। তবে এঁদের নিয়ে ভুয়ো প্রচার হলে ওঁদেরও খারাপ লাগে। ভোটকর্মীদের অনেক অভিনন্দন।’’
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের আয়োজক সংস্থার প্রধান হিসাবে তিনি বলেন, ‘‘এ বছর বেশি পুর্নর্নিবাচন হয়নি। ৩৯টি পুর্নর্নিবাচন হয়েছে মাত্র। এর মধ্যে ২৫টি অরুণাচল এবং মণিপুরে হয়েছে। ১৪ পুর্নর্নিবাচন বাকি দেশে হয়েছে।’’ জম্মু এবং কাশ্মীরের নির্বাচন নিয়ে প্রশংসা করে রাজীব বলেন, ‘‘জম্মু এবং কাশ্মীরের পরিযায়ীদের জন্য নতুন করে নিয়ম তৈরি হয়েছে যাতে তাঁরা ভোট দিতে পারেন। ৫৮.৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। ২৬টি বিশেষ পোলিং স্টেশন ছিল। মণিপুরের ১০ জেলায় ৯৪টি বিশেষ পোলিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছিল। একটিও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। আন্দামানে আদিবাসীরা ভোট দিয়েছেন। নিকোবারের শোম্বেন সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেরা প্রথম ভোট দিয়েছেন।’’
কেন্দ্রের শাসক দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিরোধী দলগুলি। তবে এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের যে সব অভিযোগ পেয়েছিলাম, তার ৯০ শতাংশের বেশি আমরা খতিয়ে দেখেছি। অনেক বড় নেতাদের নোটিস দেওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স এবং গাড়ি করে টাকা যাচ্ছে-এমন দৃশ্য এ বার দেখা যায়নি। নির্বাচন শুরু হতেই অনেক হোর্ডিং সরানো হয়েছে। নেতাদের পরিজনদের ভোটের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। সমস্ত বিতর্কিত টুইট সরানো হয়েছে। মানুষ এগিয়ে এসে ভোট দিয়েছেন।’’
২৩টি দেশ থেকে ৭৫ জন এসে ভারতের অনেক বুথে ঘুরে দেখে গিয়েছেন। জানালেন রাজীব কুমার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কী রকম হিংসা দেখতাম আপনাদের মনে আছে। কিন্তু এ বছর সে রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। ঝাড়খণ্ড, মণিপুর, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, কাশ্মীর-সহ সারা দেশে সে রকম কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি।’’
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘আগে ভোটের সময় কী রকম টাকা, শাড়ি, মদ বিলি হত আপনারা জানেন। এ বার তা রুখে দেওয়া গিয়েছে। আড়াই বছরের চেষ্টাতেই তা সম্ভব হয়েছে। আমরা জানতাম আমরা এটা হতে দেব না। ১০ হাজার কোটির জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ৪৩৯১ কোটি টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত হয়েছে।’’
রাজীব বলেন, ‘‘আমরা ভুয়ো খবর নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এ বার সে রকম ভাবে কিছু হয়নি। কৃত্রিম মেধা দিয়ে ভুয়ো ছবি-ভিডিয়োও সে ভাবে ছড়ায়নি।’’
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের সৃষ্টি হয় ভোট পরিসংখ্যান নিয়ে। যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে এঁকো প্রশ্নের উত্তরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভোটদানের পরিসংখ্যান নিয়ে বলেন, ‘‘সাত দফার তথ্য কেন এখনও দেওয়া হয়নি কেন, এই প্রশ্নের উত্তর এখনও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সোমবার পুর্নর্নিবাচন হচ্ছে কয়েকটি বুথে। প্রথমে তথ্য আসার পর তা খতিয়ে দেখা হয়। প্রথমে দিনে ভোটিং মেশিন সংরক্ষিত করা হয়। পরের দিন ভোটদানের হার খতিয়ে দেখা হয়। তার পরের দিন দেখা হয় পুর্নর্নিবাচন হবে কি না। চতুর্থ দিনে তথ্য প্রকাশিত হয়। অনেকগুলি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। প্রতি দফাতেই ভোট হওয়ার চতুর্থ দিনে তথ্য দেওয়া হয়েছে।’’
একইসঙ্গে তিনি ভোটগণনা প্রক্রিয়া নিয়ে সকলকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘ভোটগণনা খুবই বলিষ্ঠ একটি প্রক্রিয়া। দেশে মোট সাড়ে ১০ লক্ষ বুথ রয়েছে। ৩০-৩৫ লক্ষ পোলিং এজেন্ট থাকবেন বাইরে। এ ছাড়াও নজরদারি দল থাকবেন। গণনা অফিসারেরা থাকবেন। কোনও ভুল হতেই পারে না। সিসি ক্যামেরা থাকবে। মানুষের ভুল হতেই পারে। কিন্তু ভোটগণনায় কারচুপির কোনও সম্ভাবনা নেই। বিভিন্ন দল ভোটগণনা নিয়ে যে দাবি করেছিলেন, সব মেনে নেওয়া হয়েছে।’’
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছে কমিশন? উত্তরে রাজীব কুমার বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী যে, সে ভাবে হিংসা হবে না। তবে যদি হয়, তা মাথায় রেখে কয়েকটি রাজ্যে সিআরপিএফ থাকবে। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে। আমরা নিশ্চিত যে রাজ্য সরকার এবং সিআরপিএফ ভোট পরবর্তী হিংসা হতে দেবে না।’’
তবে গুজরাটের সুরাট লোকসভা কেন্দ্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়া প্রসঙ্গে জানান, ‘‘সব জায়গাতেই ভোট হওয়া উচিত। কিন্তু প্রার্থীরা যদি স্বেচ্ছায় নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন, তা হলে আমাদের কী করার আছে?” তবে নোটা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে জয়ী ঘোষণা করা কি বিধিভঙ্গ নয়? এই প্রশ্ন উত্তর এড়িয়ে গেছেন রাজীব।