পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভারতে সফলভাবে অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল প্ল্যান্ট ‘আর্টেমিসিয়া অ্যানুয়া’র উৎপাদন সম্ভব বলে দাবি করল গবেষণা কেন্দ্র সিএসআইআর-সিআইএমএপি।
‘আর্টেমিসিয়া অ্যানুয়া’ একটি লাভজনক চাষ। চার মাসেই এই গাছের ফলন সম্ভব। গবেষকরা দেখিয়ে দিয়েছেন এই গাছের পিছনে বিনিয়োগ করলে ভালো রোজগার সম্ভব। প্রতি হেক্টর পিছু ৬৫ হাজার করে রোজগার হতে পারে। তাই অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল প্ল্যান্ট ‘আর্টেমিসিয়া অ্যানুয়া’কে একটি লাভজনক ব্যবসা বলেই ধরে যেতে পারে।
আর্টেমিসিয়া ম্যানুয়া উদ্ভিদ কিভাবে মানুষের কাজে লাগবেঃ
গবেষকরা জানাচ্ছেন, অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল প্ল্যান্ট আর্টেমিসিয়া উদ্ভিদ একটি অব্যর্থ ওষুধ। এই ড্রাগ অ্যাকিউট ম্যালেরিয়া, পরজীবী কৃমি সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এতদিন এই ‘আর্টেমিসিয়া অ্যানুয়া’ জন্য চিনের উপর নির্ভরশীল ছিল ভারত। চিনের প্রায় সর্বত্র এই উদ্ভিদ দেখা যায়। অন্যান্য দেশকে এই উদ্ভিদ রফতানি করে থাকে চিন।
কিন্তু গবেষকদের দাবি, দেশের আবহাওয়াতে এই উদ্ভিদের জন্মানোর পরিস্থিতি রয়েছে। উপরন্তু চার মাসেই বৃদ্ধি সম্ভব এই উদ্ভিদের। ফলে দ্রুত বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা একটি লাভের মুখ দেখবে। তবে এতদিন ভারতও একই ভাবে চিনের উপরে নির্ভরশীল ছিল এই উদ্ভিদের জন্য।
কিন্তু কাউন্সিল অফ সাইয়েন্টিফিক অ্যান্ড রিসার্স(সিএসআইআর)ও সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিসিনাল অ্যান্ড অ্যারোম্যাটিক প্ল্যান্টস (সিআইএমএপি)-এর যথেষ্ট গবেষণার ফলে আর্টেমিসিনিন সামগ্রীর উচ্চ ঘনত্ব ১.২ শতাংশ সহ একটি নতুন প্রজাতির বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। উদ্ভিদটি থেকে প্রায় ২০০টির বেশি প্রজাতির রাসায়নিক নিষ্কাশন আর্টেমিসিয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা দিয়ে মেনিনজাইটিস চিকিৎসার জন্য ওষুধ প্রস্তুত করা সম্ভব।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সিএসআইআর-সিআইএমএপি ডিরেক্টর প্রবোধ কুমার ত্রিবেদী জানিয়েছেন, এই উদ্ভিদ মেনিনজাইটিস রোগীদের জন্য এক অব্যর্থ দাওয়াই হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
মেডিসিনাল অ্যান্ড অ্যারোমেটিক প্ল্যান্ট সায়েন্সের জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে আর্টেমিসিয়া চাষ কৃষকদের আর্টেমিসিয়া ম্যানুয়া চাষে আরও উৎসাহ বাড়াবে। কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারবে এই উদ্ভিদের ফলন।
উদ্ভিদ থেকে তৈরি ওষুধটি বর্তমানে নাইজেরিয়া, ঘানা, কঙ্গো, কেনিয়া, জাম্বিয়া, মালাউই, রুয়ান্ডা, মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে।
লখনউয়ের সিএসআইআর-সিআইএমএপি সম্প্রতি অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল প্ল্যান্ট আর্টেমিসিয়া চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কিত প্রযুক্তির জন্য চেন্নাই-ভিত্তিক সত্ত্ব বৈদ নেচারস গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে একটি মৌ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির অধীনে, কোম্পানির প্রতিনিধিরা, সিএসআইআর-সিআইএমএপি এর সহায়তায় সিম সঞ্জীবনী জাতের উচ্চ মানের এবং ফলনশীল বীজ থেকে আর্টেমিসিয়া ফসল (আর্টেমিসিয়া আনুয়া) চাষ থেকে আর্টেমিসিনিন তৈরির প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ পাবেন।
জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, সিম সঞ্জীবনী ও আর্টেমিসিয়া ফসল এই পলি ক্রশ প্রোজেনেসিস তৈরি করা হয়েছে।
বর্তমানে চুক্তির মধ্যে দিয়ে কৃষকদের এই আর্টেমিসিয়ার উৎপাদনে কাজে লাগানো হচ্ছে।
চেন্নাইয়ের সত্ত্বা ভেদা নেচার’স গ্লোভাল প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর শ্রেনিক মোদি জানিয়েছেন, কর্পোরেশনের নির্ধারিত মূল্যে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি কেনা যাবে। ফলে লাভ বেশি হবে।
ইতিমধ্যে সিএসআইআর-সিআইএমএপি-র প্রশাসনিক আধিকারিক নরেশ কুমার, সত্ত্বা ভেদা নেচার’স গ্লোভাল প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর শ্রেনিক মোদি চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
সিএসআইআর-সিআইএমএপি, লখনউ-এর পরিচালক প্রবোধ কুমার ত্রিবেদী এবং চেন্নাইয়ের মেসার্স সত্ত্ব বেদা ন্যাচারস গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক শ্রেনিক মোদির মধ্যে এই মৌ স্বাক্ষর বিনিময় হয়েছে।