পুবের কলম প্রতিবেদকঃ যোগী পুলিশের পদক্ষেপ যেন হাথরসেরই পুনরাবৃত্তি। হাথরসের ক্ষেত্রেও তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল। কিন্তু যোগীর পুলিশ দলিত পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি সেই প্রতিনিধি দলকে। লখিমপুর খেরির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না। যোগীর পুলিশ মৃতদেহগুলি নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর ময়নাতদন্ত করে। তারপর মৃতদেহগুলি নিজেদের ঘেরাটোপে রেখেই শেষকৃত্য করে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গুলিতে কোনও কৃষকের মৃত্যু হয়নি। ধাক্কাধাক্কির ফলে হওয়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে চার কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সব থেকে বড় কথা হল, তৃণমূলের ৫ সাংসদের প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার লখিমপুর খেরিতে পৌঁছতে পারলেও অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের আর কেউ সেখানে পৌঁছতে পারেননি। এমনকী কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। রবিবার রাত থেকে সীতাপুর গেস্ট হাউসে তাঁকে পুলিশ ‘বন্দি’ করে রেখেছিল। ৩০ ঘণ্টা সেখানে আটক থাকার পর মঙ্গলবার তাঁকে যোগীর পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা অমান্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
যোগী-রাজ্যে বর্বরতার প্রতিবাদ জানাতে এবং নিহত ও নিগৃহীত কৃষক পরিবারের পাশে দাঁড়াতে দলনেত্রীর নির্দেশে সোমবারই লখিমপুরের উদ্দেশ্যে রওনাও হয়েছিলেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার– জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল– রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব– দোলা সেন ও আবির বিশ্বাসরা। কিন্তু লখিমপুর যেতে গিয়ে পদে পদে বাধা পান তাঁরা। যোগীর পুলিশ ক্রমাগত তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করে। সেই বাধা উপেক্ষা করে কার্যত পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে লখিমপুর পৌঁছন দোলা সেনরা। পরে কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও সুস্মিতা দেবরাও সেখানে পৌঁছন। রাতটা লখিমপুরে কাটিয়ে মঙ্গলবার সাতসকালেই খেরিতে পৌঁছন তাঁরা। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ভগবন্তপুরে মৃত কৃষক লভপ্রীত সিংয়ের বাড়িতে যান তাঁরা। সকাল সাড়ে ন’টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। তার পরে পৌঁছন ধারারা মহকুমার লাভারি গ্রামে। মৃত কৃষকদের পরিজনকে সান্ত্বনা দিয়ে তৃণমূল সাংসদরা জানান, ‘সব সময়েই তাঁদের পাশে থাকবে দল।’চার কৃষকের নৃশংস হত্যার পিছনে দায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ছেলে আশিস মিশ্রকে এখনও কেন গ্রেফতার করা হল না, সেই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। এ দিনও তৃণমূল সাংসদদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল যোগী রাজ্যের পুলিশ। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসীরাই কাকলি ঘোষ দস্তিদারদের গাড়ি ঘিরে রেখে গ্রামে পৌঁছতে সাহায্য করেন।
সূত্রের খবর, এ দিন তৃণমূলের সাংসদরাই শুধুমাত্র খেরা পর্যন্ত যেতে পেরেছেন। অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের কেউ সেখানে যেতে পারেননি পুলিশি বাধায়। কিন্তু তৃণমূল প্রতিনিধি দল সেই বাধাকে প্রতিহত করে খেরায় পৌঁছতে সক্ষম হয়। তৃণমূলের প্রতিনিধি দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্বরোচিত এই ঘটনার পর থেকে যোগীর পুলিশ গোটা এলাকা দখল করে নিয়েছে। নিহতদের দেহ আগেই পুলিশ নিজেদের দখলে নিয়েছিল। যোগীরাজ্যে যে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা গণতন্ত্রের লজ্জা।
উল্লেখ্য, হাথরসের ঘঠনার পরও যোগীর পুলিশও ঠিক এই পথই নিয়েছিল। পুলিশকে দিয়ে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেছিল। সিদ্দিক কাপ্পানের মতো সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টÉ প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রর ছেলে আকাশ মিশ্রর ছেলের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ৪ কৃষকের মৃত্যু ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে লখিমপুর খেরি। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের ৫ সাংসদের প্রতিনিধি দলকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।