পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ পবিত্র রমযান মাসে মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বান্দাহদের বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন। এই মাসে বান্দাহ্রা পাপ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ্ প্রিয় মুমিন হতে পারেন। রমযান মাসে শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জান্নাতের দরজা খোলা রাখা হয়। কিন্তু তারাই এ থেকে ফায়দা নিতে পারেন যাঁরা সমস্ত ধরনের লোভ, লালসা ও প্রলোভন থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ধ্যানে নিজেকে নিমগ্ন করবেন।
রমযান মাসে একটি নফল ইবাদাত করলে একটি ফরযের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। আর একটি ফরয আদায় করলে সত্তরটি ফরযের সমান সওয়াব অর্জিত হয়। রমযানের এই সুযোগ সকলেরই গ্রহণ করা প্রয়োজন। মাহে রযমানের প্রথম দশদিন আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত রয়েছে। আজ রহমতের তৃতীয় দিন।
রমযান মাসে শয়তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা সম্পর্কে হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত রাসূলে করীম সা. বলেছেন, ‘রমযান মাসের প্রথম রাত্রি উপস্থিত হলেই শয়তান ও দুষ্টতম জিনগুলোকে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় এবং জাহান্নামের দুয়ারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতঃপর এর একটি দরজাও খোলা হয় না এবং বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, অতঃপর এর একটি দরজা ও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষণাকারী ডেকে ডেকে বলতে থাকে হে! কল্যাণের প্রত্যাশী, অগ্রসর হও এবং হে! খারাপের ইচ্ছা পোষণকারী! বিরত হও, পশ্চাৎপসরণ কর। আর আল্লাহর দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়া বহুলোক রয়েছে।’ এইভাবে (রমযানের) প্রত্যেক রাতেই করা হয়।’ (তিরমিযি)
রোযা অবস্থায় দিনের বেলায় কেউ কেউ ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলেন অথবা পান করে ফেলেন অথবা ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে মনে করেন রোযা ভঙ্গ হয়ে গেছে। কিন্তু না, ইসলাম মুসলমানদের জন্য সহজভাবে ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের সুযোগ করে দিয়েছে। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বিধিবিধান নির্ধারণ করেছেন। হাদিস শরীফে যে সকল কারণে রোযা ভঙ্গ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে সেই কারণগুলো হল রোযাদার ভুলক্রমে কিছু খেলে, পান করলে। নিদ্রাবস্থায় যদি স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। অথবা কামভাবে স্ত্রীর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার কারণে বীর্যপাত ঘটলে রোযা ভঙ্গ হবে না। চোখে সুরমা লাগালে রোযা নষ্ট হয় না। নিজের স্ত্রীকে চুম্বন করায় যদি বীর্যপাত না হয়, যদি কারও এই অটল বিশ্বাস থাকে যে, স্ত্রীকে চুম্বন করলে বীর্যপাত হবে না, তাহলে এই অবস্থায় রোযাদার ব্যক্তি স্ত্রীকে মহব্বতের চুম্বন দিতে কোনও ক্ষতি নেই। যদি নিজের উপর আস্থা না থাকে, তাহলে স্ত্রীকে রোযা অবস্থায় চুম্বন দেওয়া মাকরূহ।
রোযা অবস্থায় যে সকল কাজ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়।
সেসব কাজগুলো হল, কেহ মুখ ভরে বমি করলে। কোনও বস্তু গিলে ফেললে। বীর্য বের করলে। নাকে, কানে ও মাথায় তরল ওষুধ লাগলে আর ওই ওষুধ যদি পেট বা মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এটি ইমাম আবু হানিফার মতো। তবে অনেকের মতে, এতে রোযা ভঙ্গ হবে না। স্ত্রীলোক যদি তার গুপ্তাঙ্গে ওষুধ লাগায় তবে সর্বসম্মতিক্রমে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি পেটে গেলে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে। ভুলক্রমে কোনও খাওয়া আরম্ভ করে রোযা ভঙ্গ হয়ে গেছে মনে করে আবার আহার করলে। দাঁত থেকে ছোলা পরিমাণ বস্তু বের করে খেয়ে ফেললে। জোরপূর্বক রোযাদারকে কিছু পানাহার করালে। এসব কারণে রোযাদারের রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর এজন্য কাফফারা আদায় করার প্রয়োজন নেই। শুধু কাযা রোযা আদায় করলেই চলবে। তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা অবস্থায় পানাহার বা স্ত্রী সহবাস করে তাহলে শুধু কাযা আদায় করলে হবে না বরং কাফফারা আদায় করতে হবে।
রোযা দু’প্রকার ফরজ ও নফল। আবার ফরয রোযা দুই প্রকার একটি কোনও নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত যথা— রমযান মাসের রোযা ও মান্নতের রোযা। এই প্রকার রোযার নিয়ত রাতে করতে হয়। যদি ভুলে কেউ রাতে নিয়ত না করে তাহলে দ্বিপ্রহরের আগে নিয়ত করলেই চলবে। আর অপর প্রকার রোযা হল যা দায়িত্বে আসার কারণে পালন করতে হয়। যেমন, রমযান মাসের কাযা রোযা, সাধারণ মান্নতের রোযা ও কাফফারার রোযা। এই প্রকারের রোযার নিয়ত রাতে না করলে শুদ্ধ হবে না। সকল প্রকার রোযার নিয়ত দ্বিপ্রহরের পূর্বে করলে চলবে। রোযার নিয়তে সেহরি খেলেই নিয়ত করা হয়ে যায়। আলাদাভাবে মুখে নিয়ত পড়ার কোনও প্রয়োজন নেই।