পুবের কলম প্রতিবেদক: হওয়ার কথা ছিল ধর্মশালা। কিন্তু, চালু হয় মাত্র দু’টি বেড নিয়ে এক হাসপাতাল। তখন ১৯৩০-এর দশক। সেই শুরু দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে অবস্থিত রামরিকদাস হরলালকা হাসপাতালের পথ চলা। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে, ইতিহাসের বহু সাক্ষী হয়ে থাকা এই হাসপাতাল বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমইঅ্যান্ডআর), কলকাতার একটি অ্যানেক্স হাসপাতাল। এই হাসপাতালে চালু রয়েছে নিউরো মেডিসিন বিভাগের পরিষেবা।
রামরিকদাস হরলালকা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তাঁর নাতি সন্তোষ হরলালকার কথায়, ‘তখন ১৯৩০। ভবানীপুরে একটি বাড়ি কিনে ধর্মশালা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমার ঠাকুরদা রামরিকদাস হরলালকা। কিন্তু ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় তখন আমার ঠাকুরদাকে বলেছিলেন, কলকাতায় আরও অনেক হাসপাতালের দরকার। এর পর ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের পরামর্শ এবং গাইড মতো এই হাসপাতাল চালু করেছিলেন আমার ঠাকুরদা।’ তিনি বলেন, ‘রামরিকদাস হরলালকার কাছে তখন এত টাকা ছিল না যে হাসপাতাল চালু করা সম্ভব হবে। অথচ, হাসপাতালেরও প্রয়োজন। তাই মাত্র দু’টি বেড নিয়ে ওই একটি বাড়িতেই চালু করা হয় হাসপাতাল। এর পর এক এক করে এই একটি বাড়ি থেকে হাসপাতালের বাড়ির সংখ্যা হয় ছ’টি, আর বেডের সংখ্যা দুই থেকে পৌঁছে যায় ১৫০-এ।’
সন্তোষ হরলালকা জানান, একটি ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে এই হাসপাতালে চালু হয়েছিল একের পর এক বিভাগ। চালু হয়েছিল আউটডোর, ইনডোর, ইমারজেন্সি, অপারেশনের পরিষেবা। এই অবস্থায় দেখা দেয় এখানকার কর্মীদের অসন্তোষ। তার জেরে রাজ্য সরকারকে এই হাসপাতাল দান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সন্তোষ হরলালকার বাবা ভগবানদাস হরলালকা। এর পর ১৯৮৬-তে এই হাসপাতাল চলে এসেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে। এ দিকে, ২০১১-য় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর থেকে রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানোন্নয়নের জন্য একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সব পদক্ষেপের অঙ্গ হিসাবে ২০১৭-য় রামরিকদাস হরলালকা হাসপাতালকে আইপিজিএমইঅ্যান্ডআর কলকাতা-র একটি অ্যানেক্স হাসপাতাল হিসাবে চালু করা হয়।
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে রামরিকদাস হরলালকা হাসপাতালে মোট অনুমোদিত বেডের সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে চালু রয়েছে ৭১টি বেড। এই ৭১টি বেডের মধ্যে পুরুষ রোগীদের জন্য ৪৩টি, মহিলা রোগীদের জন্য ২৩টি এবং আইসিইউ-এর জন্য রয়েছে ৫টি বেড। এই বেডগুলিতে নিউরোমেডিসিন বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা চলে। নিউরো মেডিসিনের এই ইন্ডোর পরিষেবার পাশাপাশি এখানে এখন চালু রয়েছে স্ট্রোক ক্লিনিক। সময় নষ্ট না করে যাতে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়, সেই লক্ষ্যে এই হাসপাতালে অন্য বিভিন্ন চালু পরিষেবাগুলির মধ্যে রয়েছে: এক্স-রে (পোর্টেবল), ইউএসজি, ইইজি, এনসিভি, সিটি স্ক্যান (ইকো), ইসিজি।
এই হাসপাতালের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে আইপিজিএমইঅ্যান্ডআর কলকাতা-র অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফোন না ধরায় এই হাসপাতালের ডেপুটি সুপার বিশ্বজিৎ মণ্ডলেরও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষস্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘এখানে খুব ভালো পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।’ আর, সন্তোষ হরলালকার কথায়, ‘এখানে তিনটি বাড়ি সংস্কার করে এই হাসপাতালের অনেক উন্নয়ন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি তিনটি বাড়ি সংস্কার করে এখানে অর্থোপেডিক বিভাগের পরিষেবা চালু হবে বলে জানানো হয়েছিল। আশাকরি এখানে ইমার্জেন্সি এবং ওপিডি পরিষেবাও চালু হবে।’