কিবরিয়া আনসারী: মঙ্গলবার অল ইন্ডিয়া ইমাম-মুয়াজ্জিন অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন-এর মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় মহতী ঈদ মিলনী উৎসব। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী আবু তাহের খান, বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ইউসুফ পাঠান, মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি ও কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার, ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগমের ডিরেক্টর চাঁদ মুহাম্মদ, তৃণমূল নেত্রী শাওনি সিংহ রায়, বহরমপুরের ব্লক প্রেসিডেন্ট আইজুজ্জিন মণ্ডল, ইমাম সংগঠনের জেলা সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, সভাপতি মুজাফফর খান, চেয়ারম্যান আনসার আলি প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলার ইমাম-মুয়াজ্জিনদের উদ্দেশ্যে ইমরানের বক্তব্য, ‘গত ক’দিন আগেই পবিত্র রমযান মাস শেষ হয়েছে। রহমতের রমযান মাসে আমরা হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে ইফতার করেছি। আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ যেন না আসে।’ আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান। লোকসভা ভোটে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা জানিয়েছেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘সবাই গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হবেন। মাথায় রাখবেন প্রত্যেকটা ভোট যেন গণতন্ত্র, সংবিধান ও অধিকারের পক্ষে পড়ে। যাকে খুশি ভোট দিন, কিন্তু ফ্যাসিবাদীদের ভোট দেবেন না। আপনারা জানেন, এই ফ্যাসিবাদকে রুখতে একমাত্র বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পারবেন এবং তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তৃণমূণ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনারা সমাজের সম্মানীয় ব্যক্তি, আপনাদের মানুষকে এগুলো বোঝাতে হবে।’
এ দিকে ইউসুফ পাঠান বলেন, ‘আমি রাজনীতি করতে আসিনি, তবে নিশ্চিত উন্নয়নের রাজনীতি করব’। ঈদ মিলনী উৎসবে বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠান আরও বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে আপনাদের সেবা করতে পাঠিয়েছেন। আমি আপনাদের বন্ধু, ভাই ও ছেলে। আমি সর্বদা আপনাদের সঙ্গেই থাকব।’ মানুষের ভালোবাসায় তিনি সাংসদ নির্বাচিত হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন ইউসুফ। মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষকে আশ্বস্ত করে প্রার্থীর বক্তব্য, ‘আমি ৫ বছরের জন্য আসিনি। আমার জীবনকে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত করব। নুন খেলে তার মূল্য দিতে শিখিয়েছেন আমার পরিবার এবং ধর্ম। আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে এসেছি।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘আপনারা যদি আমার দিকে ১ পা এগিয়ে আসেন আমি আপনাদের দিকে শত পা এগিয়ে যাব। এটা আমার ওয়াদা। আপনারা ২টো কথা বললে আমি আপনাদের জন্য ১০০টা কথা বলব। আপনাদের কথা পার্লামেন্টে পৌঁছে দেব। আমি দুর্বল মানুষ, তাই আপনাদের দোয়া, আর্শিবাদ ও শক্তি প্রয়োজন।’
নিজের জীবনের স্মৃতি চারণা করে ইউসুফ বলেন, ‘আমি একজন মুয়াজ্জিনের ছেলে। আমার বাবা ৩৫ বছর মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাবা-মা ও আল্লাহ্ দোয়ার আমি ক্রিকেটার হয়েছি। দেশের হয়ে খেলতে গিয়ে বিশ্বের দরবারে ভারতকে পৌঁছে দিয়েছি। দেশের নাম উজ্জ্বল করেছি। আমাদের দ্বীনের জন্য পরিশ্রম করার পাশাপাশি দুনিয়া ও সমাজের জন্যও পরিশ্রম করতে হবে।’
এ দিকে ইমাম সংগঠনকে আরও সংঘবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিয়েছেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘নিজেকে বড় নেতা ভাবা বন্ধ করতে হবে। আপনারা সবাইকে নিয়ে চলার মানসিকতা তৈরি করুন। আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাইকে নিয়ে লড়াইয়ে নামতে হবে।’
অন্যদিকে কান্দির তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, ‘আমরা রবীন্দ্র-নজরুলের ভারতবর্ষ দেখে বড় হয়েছি। একদিকে সুভাষচন্দ্র বোস অন্যদিকে শাহনাওয়াজদের দেখেছি। কিন্তু আজ দেশ কোথায় গিয়েছে। দেশে আপনার আমার অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে। আমার ধর্মপালনের অধিকার, কথা বলার অধিকারগুলো লুণ্ঠিত হচ্ছে। সংবিধানকে রক্ষা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খানও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন। তৃণমূল সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম সকলকে নিয়ে চলার কথা বলে। তাই বলা হয়, ঈশ্বর ও আল্লাহ্ তেরে নাম, সবকো সম্মতি দে ভগবান। ভারত এভাবেই তৈরি হয়েছে। দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে কোনও ধর্মকে বাদ দিয়ে নয়। কেউ রক্ত দিয়েছে তো কেউ প্রাণ দিয়েছে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার, বলেই আজকের ‘ঈদ মিলনী উৎসব’-এ আসতে পেরেছি।’