নিজস্ব প্রতিনিধি: হুমকি-ধমকিকে কোনও কালেই পরোয়া করেন না তিনি। ভয়-ডর নামক কোনও শব্দ তাঁর অভিধানে নেই। সেই অকুতোভয় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার পদ্ম শিবিরের শক্ত ভিত আলিপুরদুয়ারের মাটিতে দাঁড়িয়েই বাংলা ভাগের স্লোগান তোলা বিজেপি ও তাদের দোসরদের উদ্দেশে হুঙ্কার ছেড়েছেন, ‘বুকে বন্দুক ঠেকালেই বাংলা ভাগ হতে দেব না। রক্ত দেব, তবু বাংলা ভাগ মেনে নেব না।’ কীভাবে বন্দুকের নলকে ভোঁতা করে দিতে হয়, তাও তার জানা আছে বলে রাজ্য ভাগের দাবিতে সরব হওয়া রাজনৈতিক ধান্ধাবাজদের সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
বিধানসভা ভোটের পরেই লাগাতার উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলকে পৃথক রাজ্য করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাংসদ-বিধায়কদের একাংশ। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রচ্ছন্ন মদত থাকায় লাগাতার একই দাবি জানিয়ে চলেছেন তাঁরা।
বিজেপি নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে সোমবারই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে হুমকি দিয়েছিলেন কুখ্যাত সন্ত্রাসী তথা জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান জীবন সিংহ। কোচ-কামতাপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পা ফেললে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ারও গর্জন ছেড়েছিলেন গেরুয়া শিবির ঘনিষ্ঠ কুখ্যাত জঙ্গি নেতা। আর সেই হুমকির ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এদিন আলিপুরদুয়ারে দাঁড়িয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ও তার মদতদাতাদের পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
ভিড় উপচে পড়া কর্মিসভায় এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ভাগের প্রবক্তাদের এক হাত নিয়ে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে ভাগ করতে পারবেন? কেউ ব্যানার্জি তো কেউ চ্যাটার্জি, কেউ রায় তো দাস, কেউ আলম তো মাস্টার, কেউ মুণ্ডা তো কেউ সর্দার। কত মানুষ কত ধর্ম। আমরা সবাই এক হয়ে থাকব। রক্ত দিতে রাজি আছি। কিন্তু বাংলা ভাগ হতে দেব না।’ নাম না নিয়ে কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠনের প্রধান জীবন সিংহের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কাজ নেই কর্ম নেই, আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। বাংলা ভাগ না করলে আমাকে মেরে ফেলবে বলেছে। ক্ষমতা থাকলে আমার বুকে বন্দুক ঠেকাও। আমি অনেক বন্দুক দেখে এসেছি। আমাকে এ সব বন্দুক-টন্দুক দেখিও না। আমিও জানি কীভাবে বন্দুকের নল ভোঁতা করতে হয়।”
বাংলা ভাগে মদত দেওয়ার জন্য বিজেপিকে এক হাত নিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘বিজেপি নেতারা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বন্ধ চা বাগান খুলে দেবে। একটাও চা বাগান খোলেনি। এখন বাংলা ভাগে ইন্ধন দিচ্ছে। বিজেপি যখনই নির্বাচন আসে তখনই ভাগ করবার কথা বলে। ভাগাভাগির কথা বলে। কী ভাগ করবে? পাহাড় ভাগ করতে পারবে? গোর্খাদের ভাগ করবে? কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা, চিলা রায়কে ভাগ করতে পারবে? বলেছিল, গোর্খাল্যান্ড করবে। আমরা করতে দিই নি। কোনও দিন করতেও দেব না। ভোটের সময় পাহাড়ের সঙ্গে তরাই ডুয়ার্সের ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়া ছাড়া ওদেরর কোনও কাজ নেই।’
রাজ্যে তৃণমূল সরকার না থাকলে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুফল থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবেন বলেও এদিন দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘আমাদের সরকার সব কাজ করে, করবেও। আমাদের কাজে কোনও ভুল হলে আমাদেরই বলুন। কিন্তু বিজেপি বা সিপিএমের কথা শুনে কিছু বিশ্বাস করবেন না। তৃণমূল সরকার না থাকলে লক্ষীর ভাণ্ডার, দুয়ারে রেশন, বিনা পয়সায় চিকিৎসা কিছুই হবে না। সব নিজেদের করে নিতে হবে।’
গত লোকসভা ভোটের পরে বিধানসভা ভোটেও আলিপুরদুয়ারে বড় ধাক্কা খেতে হয়েছে রাজ্যের শাসকদলকে। পাঁচটি বিধানসভা আসনের একটিতেও জয় পায়নি। খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এদিনের সভায় তা নিয়ে কিছুটা আপশোষও করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই সঙ্গে বিজেপি-সিপিএমের অপপ্রচারে বিশ্বাস না করারও অনুরোধ জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার সব কাজ করে, করবেও। আমাদের কাজে কোনও ভুল হলে আমাদেরই বলুন। কোনও নেতার কাজের জন্য গোটা দলকে ভুল বুঝবেন না। কোনও ভুল করলে আমরা সংশোধনও করি। কিন্তু বিজেপি-সিপিএমকে বিশ্বাস করবেন না।’
এদিন আলিপুরদুয়ারে তৃণমূল নেত্রীর সভায় প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে প্রচুর মানুষ হাজির হয়েছিলেন। মমতার সভা চলাকালীন গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মুসকান পরভিন। আর তা জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ভাষণ থামিয়ে দিয়ে এগারো বছরের ছাত্রীকে মঞ্চে ডেকে এনে তাকে সুস্থ করে তোলেন।