দেবশ্রী মজুমদার, বোলপুরঃ প্রযুক্তির যুগে এখনও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ। একদল মানুষ সেই বিশ্বাসকে জিইয়ে রেখেছে, আর পরোক্ষভাবে বলি হচ্ছে কিছু নিরীহ মানুষ। এবার সেই তন্ত্র সাধনার কোপ পড়ল ২০ বছরের এক আধিবাসী যুবকের ওপরে। সিদ্ধিলাভের উদ্দেশ্যে কেটে নেওয়া হল তার জিভ। ঘটনার জেরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শান্তিনিকেতন থানা এলাকায়। বীরভূমের ফুলডাঙা আদিবাসী গ্রামের ঘটনা। এই ঘটনায় স্থানীয় এক তন্ত্রসাধিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। এই গ্রামের বছর কুড়ি বয়সের সমাই সোরেন বলে এক যুবকের জিভ কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে গ্রামেরই দুই মহিলার বিরুদ্ধে। যাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে তন্ত্র সাধনার অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, ওই মহিলা তন্ত্র সাধনা করেন। সে জন্যই ওই যুবকের জিভ কেটে নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় উত্তপ্ত গ্রাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত আটটা নাগাদ সমাই তার বন্ধু মুকুল মুর্মু পাশের বাড়িতে মদ্যপান করতে যান।
মুকুল মুর্মু জানান, ‘কোনদিন আমাদের মদ খেতে ডাকেনি। সোমবার ডেকেছিল। ওরাই টাকা দিয়েছিল মদ আনার জন্য। মদ খেতে খেতে একসময় আমি শৌচকর্ম সারতে ঘরের বাইরে যাই। ফিরে এসে দেখি সমাইয়ের বুকের ওপর চেপে বসে ওই মহিলা ওর জিভ কাটছে। কোনমতে ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাইরে পালিয়ে যাই।”
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই বাড়ির মহিলা পাকুর টুডু এবং তার মেয়ে ওই যুবকের জিভ কেটেছে। আহতের কাকিমা বলেন, কেন জিভ কাটল তা তো অভিযুক্ত বলছে না। উল্টে বলছে আমি ছিলাম না।
স্থানীয় বাসিন্দা দেবু সোরেন বলেন, ‘পাকুর টুডু বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, উনি তান্ত্রিকের কাজ করেন। উনিই জিভ কেটেছেন। শুধু তাই নয় সিদ্ধিলাভের জন্য তা চিবিয়েও খেয়ে নিয়েছে। যেহেতু নিজের ঘরের মধ্যে মন্দিরে জিভ কেটেছে। তাই আমাদের সন্দেহ, তন্ত্র সাধনার জন্য বলি দিতেই হয়তো জিভ কেটেছে। গ্রামের কারোর সঙ্গে ওদের কোনও সদ্ভাব নেই।’
তবে তন্ত্র সাধনার ঘটনা মানতে চাইছেন না অধুনা তৃণমূলে যোগ দেওয়া আদিবাসী নেতা সুনীল সোরেন। তিনি বলেন, ‘যেটুকু খবর পেয়েছি ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরে ওই মহিলার পরিবারের উপর অত্যাচার চালাত। তাই বাধ্য হয়ে এই কাজ করেছে। আদিবাসী সমাজে তন্ত্র সাধনা হাস্যকর কথা। ওই মহিলাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’
আহত সমাইকে প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় চিকিৎসার জন্যে। সেখান থেকে কলকাতায় পিজিতে রেফার করা হয়। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসার অসুবিধায় পরিবারের লোকজন তাকে ফের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে চলে আসে। চিকিৎসার জন্য টাকা সংগ্রহের কাজ চলছে।