মোল্লা জসিমউদ্দিন: গত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে মেডিকেল কলেজ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ বনাম ডিভিশন বেঞ্চের চরম আইনী সংঘাত পৌঁছেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বধীন বৃহত্তর ডিভিশন বেঞ্চে। নির্দেশনামা ঘিরে আইনী সংঘাতের সময় কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে রাজ্যের এজি কিশোর দত্তের বাদানুবাদ ঘটেছিল।
কলকাতা হাইকোর্টের শতাধিক আইনজীবী প্রধান বিচারপতিকে এজিকে হেনস্থা করার জন্য স্মারকলিপি দেওয়া পর্যন্ত হয়।তীব্র চাপান-উতর পরিস্থিতি মিটলো এদিন।বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের কাছে ক্ষমা চাইলেন। মঙ্গলবার এজলাসে বসেই বিচারপতি বলেন, -‘ আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আই অ্যাম ভেরি সরি’। এর প্রতুত্তরে এজি কিশোর দত্ত বলেন, -‘ আমিও আপনাকে অনেক কথা বলেছিলাম’। দুজনের এই বাক্যালাপের পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং এজির দ্বন্দ্ব মিটল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।
প্রায় দু সপ্তাহ আগে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে ভর্তি সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন এজি এবং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে তুমুল বাগযুদ্ধ হয়। এজলাসে বসে বিচারপতি অ্যাডভোকেট জেনারেলের উদ্দেশে বলেছিলেন, -‘ কার পদলেহন করে আপনি দ্বিতীয়বারের জন্য অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়েছেন, তা আমি জানি’। এজিও বলেন, -‘ আপনাকে বিজেপি ভোটের টিকিট দিতে চেয়েছিল বলে আমার কাছে খবর আছে’। বিচারপতি জবাবে তা অস্বীকার করেন।
এজলাসে নজিরবিহীন দুজনের এই বাগযুদ্ধ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন বহু আইনজীবী। ওই ঘটনার পর হাইকোর্টের একাংশ আইনজীবী দাবি তোলেন, -‘ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে এজির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে’।
প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে ওই আইনজীবীরা ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলে অভিযোগ করেন, -‘ বিচারপতির মন্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। তাছাড়া তিনি অ্যাডভোকেট জেনারেলের পদমর্যাদাকেও অপমান করেছেন’। তবে এদিন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন -‘ আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আই অ্যাম ভেরি সরি’।আমায় আমার বন্ধু কিশারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি রাগের মাথায় অনেক কিছু বলেছি। বারের সকলের জানা উচিত। আমি ক্ষমাপ্রার্থী’। এর জবাবে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ‘আমিও, ওই দিন অনেক কিছু বলেছিলাম’।
বিচারপতি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘আপনি,যা শুনেছেন তাই বলেছেন। তবে আমি যা বলেছিলাম রাগ করে’।বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন না, কিশোর আমার কত উপকার করেছে। এমনও হয়েছে, কিশোর আর আমার আর এক বন্ধু না থাকলে আমি মরে যেতাম’।তিনি যোগ করেন, ‘কিশোর, আমি, জয়মাল্য ( বিচারপতি) আরও কয়েকজন আমরা এক সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম’।
মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির প্রসঙ্গে কাস্ট সার্টিফিকেট জাল করার অভিযোগ ওঠে। একে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া মামলা প্রায় দু সপ্তাহ আগে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় । এদিন অন্য একটি মামলার শুনানির সময় বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় ক্ষমা চেয়ে নেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তর কাছে ।এতে স্বস্তি মিললো সাধারণ বিচারপ্রার্থীদেরও।