আইভি আদক, হাওড়াঃ আইসিইউ-তে থাকা অবস্থায় এক্লাম্পজিয়া’য় আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলার বিরল সিজার করে সাফল্য পেলেন হাওড়া জেলা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। বুধবার বিকেলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মা ও সদ্যোজাত কন্যা সন্তান। এখন হাওড়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন প্রসূতির পরিবারও। প্রসঙ্গত, উচ্চ রক্তচাপজনিত ভয়ঙ্কর অসুখ এই প্রি-এক্লাম্পজিয়া। প্রেগন্যান্সির সময়ে এই রোগ হানা দিতে পারে মহিলার শরীরে। অসুখটি এতটাই জটিল যে অনেক সময়েই সন্তানসম্ভবা মহিলা এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের জীবন সংশয় পর্যন্ত ঘটতে পারে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলার শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছিল যে তিনি ভেন্টিলেশনে চলে গিয়েছিলেন। মা ও শিশুর বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। অবশেষে প্রায় ২০ দিনের যমে-মানুষে টানাটানির পর ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থাতেই ঝুঁকি নিয়ে ওই মহিলার সিজার করেন হাওড়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সেই প্রচেষ্টা সফল হয়। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলোতে পরিকাঠামো কিংবা চিকিৎসার মান নিয়ে বিভিন্ন সময়েই নানান অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে সেই সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় ভেন্টিলেশনের মধ্যে থাকা এক মুমূর্ষু প্রসূতির শুধু প্রাণই বেঁচেছে তাই নয়, তিনি সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। হাওড়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা এই ঘটনাকে বিরল হিসেবেই দেখছেন। হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ওই প্রসূতির নাম অনিতা অধিকারী (৩২)। গত ২০ অক্টোবর ওনাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাওড়ার সালকিয়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকার রশিকৃষ্ণ লেন থেকে আনা হয়েছিল। উনি এক্লাম্পজিয়া (eclampsia) রোগে আক্রন্ত হয়ে রাতে যখন হাসপাতালে আসেন তখন ওনার শরীরে খিঁচুনি হচ্ছিল। অক্সিজেন লেভেল অনেক কমে গিয়েছিল। সেই অবস্থায় ওনাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। এবং আমাদের হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অ্যানেস্থিয়াটিষ্ট চিকিৎসকেরা এবং আইসিইউর চিকিৎসকেরা মিলে সিদ্ধান্ত নেন ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থাতেই ওনার সিজার করা হবে। পরের দিনে ওনার সিজার করা হয়। উনি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের শিশুর ওজন কম ছিল। তার অক্সিজেনের সমস্যা ছিল। মা ও সদ্যোজাত দুজনকেই চিকিৎসকেরা দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সুস্থ করে তুলেছেন। আজই এদের বাড়ি ফেরানো হচ্ছে। বাচ্চা এবং মা দুজনে সুস্থ আছে। যেভাবে আমাদের চিকিৎসকেরা প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন এবং ঝুঁকি নিয়েই প্রচেষ্টা করেছিলেন তা সফল হওয়ায় আমরা প্রত্যেকেই খুব খুশি। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ আমরা জিততে পেরে খুশি। এদিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে অনিতাদেবী বলেন, আমাকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন আমার জ্ঞান ছিলনা। আমি কথা বলার মত অবস্থায় ছিলাম না। এবং আমার প্রেসার অনেক বেশি ছিল। ওই অবস্থায় আমাকে আইসিইউ’তে ভর্তি করা হয়। প্রায় চার পাঁচ দিন পরে আমার জ্ঞান ফিরে আসে। তখন আমি জানতে পারি পুরো ঘটনা। হাওড়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই। তাদের জন্যই আমি নতুন জীবন আজ ফিরে পেলাম। হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই আমার কাছে আজকে ভগবান।আ