বিশেষ প্রতিবেদন: বিশ্বের অন্যতম প্রধান ট্রেড-রুট রেড-সি বা লোহিত সাগরে (red sea) আমেরিকার সঙ্গে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহর বাহিনীর সংঘাতের প্রভাব সরাসরি পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লোহিত সাগর দিয়ে বাণিজ্যকে নিরাপদ বলে মনে করছে না বিশ্বের বহু সংস্থা। প্রায় প্রতিদিনই আনসারুল্লাহর (huti) অবস্থান লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র মারছে আমেরিকা। এর জবাবে আনসারুল্লাহ (ansarullah) যোদ্ধারাও লোহিত সাগরে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলিতে আক্রমণ করছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় দেশগুলির পাশাপাশি এশিয়ার (Asia) দেশগুলির ওপরও বাণিজ্যিক চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। সময় মতো আমদানি-রফতানি করতে না পারায় ব্যবসায়ীয়া ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, শিপমেন্ট দিনের পর দিন ধরে আটকে থাকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রেড-সিতে চলমান এই যুদ্ধের কারণে ঠিক কতটা চাপে আছে ভারত? আন্তর্জাতিক ব্যবসার (foreign market) ক্ষেত্রে ভারত লোহিত সাগরের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। লোহিত সাগর দিয়ে মূলত চারটি অঞ্চলে যাওয়া যায়। অঞ্চলগুলি হল- ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য (west countries) । জানা যায়, রেড-সি দিয়ে ভারত তার রফতানির অর্ধেকেরও বেশি করে থাকে। প্রতিবছর প্রায় ২১৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি সামগ্রী বিদেশে যায় ভারত থেকে। আর এই রুটে ভারত প্রতিবছর তার আমদানির ৩০ শতাংশ করে থাকে যা ২০৫ বিলিয়ন ডলারের সমান। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে রেড-সিতে ভারতের ব্যবসা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। জানা যায়, বিকল্প রুট (route) ব্যবহারের কারণে ভারতের শিপমেন্ট অনেকটা বিলম্বিত হচ্ছে। রেড-সি’র পরিবর্তে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘কেপ অফ গুড হোপ রুট’ ব্যবহার করে যেতে হচ্ছে ইউরোপে। এতে অতিরিক্ত ৬,৫০০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে জাহাজগুলিকে। এভাবে যাত্রা যেমন ব্যয়বহুল হচ্ছে তেমনই কঠিন হয়ে যাচ্ছে সব পর্যায়ে ব্যবসায়িক মাধ্যমগুলিকে সচল রাখা। জানা গেছে, রেড-সিতে সংঘাত শুরুর পর থেকে ভারতের ২৫ শতাংশ কার্গো জাহাজ মাঝপথ থেকে ফিরে এসেছে ও ৯৫ শতাংশ কার্গো জাহাজ (cargo ship) দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যানেল দিয়ে ইউরোপ গিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সংকট সমাধানের লক্ষ্য ঠিক না করা হলে ভবিষ্যতেও একইরকম চলতে পারে। ভারত (india) অবশ্য নিজের তরফে বাণিজ্যিক-রুটকে নিরাপদ রাখতে নৌ-বাহিনীকে সক্রিয় রেখেছে। সাগরের গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলিতে টহল দিচ্ছে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ। কিন্তু এতকিছু থাকা সত্ত্বেও রেড-সি হয়ে বাণিজ্য করতে পারছে না নয়া দিল্লি। একটি পরিসংখ্যান বলছেন, ২০২২-২০২৩ সালের মধ্যে ৪৫১ বিলিয়ন ডলারের সামগ্রী বিদেশে রফতানি করেছে ভারত। এতে ভারতের সম্ভবত ক্ষতি হয়েছে ৩১ বিলিয়ন ডলারের। ভারত সরকারের তরফে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কিছু জানানো না হলেও এর ধাক্কা ইতিমধ্যেই টের পেয়েছে ভারত। কয়েকটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলেছে, রেড-সি সংকট চলতে থাকলে ২০২৪ সালে এশিয়ার অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ কমে যেতে পারে। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশও এই অর্থনৈতিক অবস্থার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা।