পুবের কলম প্রতিবেদকঃ দেশে বেড়েই চলেছে আত্মহত্যার ঘটনা। কখনও মা উড়ালপুল– কখনও হাওড়ার বঙ্কিম সেতু– কখনও বা অন্যান্য উপায়ে প্রতিদিন আত্মঘাতী হচ্ছেন দেশবাসীর একটা বিরাট অংশ। রাজ্য হিসেবে দেখতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের চিত্ররা আরও খারাপ। আত্মহত্যার ঘটনার নিরিখে দেশের মধ্যে চার নম্বরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। প্রথম তিনে রয়েছে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশ।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে ২০২০ সালে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫২ আত্মহত্যা হয়েছে দেশে। গড়ে প্রতিদিন ৪১৮ জন। ১৯৬৭ সালের পর যা সর্বোচ্চ। ২০১৯-এর থেকে ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৯-এ সংখ্যাটা ছিল ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ১২৩।
গতবছর ১৩–১০৩টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে– যা সারাদেশের ৮.৬ শতাংশ। মহারাষ্ট্রে এই সংখ্যাটা ১৯–৯০৯ (১৩ শতাংশ)– তামিলনাডYতে ১৬–৮৮৩ (১১শতাংশ)– মধ্যপ্রদেশে ১৪–৫৭৮ (৯.৫ শতাংশ)। ২০১৯ সালে দেশের নিরিখে রাজ্যে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান ছিল ৯.১ শতাংশ। ২০২০-তে বেড়ে তা হয়ে ৯.৫ শতাংশ। মোট ৩৩ শতাংশ মানুষের সুইসাইডের কারণ পারিবারিক সমস্যা। ১৮ শতাংশ মানুষের কারণ অসুস্থতা (দেশে)।
সমীক্ষায় দেখা গেছে– গোটা দেশে ডিপ্লোমা– গ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েট করা উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে সুইসাইডের প্রবণতা বেড়েছে। শিক্ষাহীন বা কম শিক্ষিতদের মধ্যে প্রবণতা কমেছে। এর কারণ কী– সেই ব্যাখ্যা দিতে দিয়ে মনোবিদ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন– ২০২০ সালের শেষের দিকে মেডিক্যাল কাউন্সিলের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে– করোনাকালে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩ শতাংশ ভারতীয় কোনও না কোনওভাবে মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। লকডাউনের সময় এর পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। লকডাউনের পর শতাংশের হার কমলেও জটিল মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ছাত্রদের উপর এর বিপুল প্রভাব পড়েছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশাহারা হয়ে যায় বহু ছাত্রছাত্রী। বিশেষ করে যারা পড়াশোনায় একটু ভালো– উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রী– বিদেশে পড়তে যাওয়ার কথা ভেবেছে– এদের মধ্যে উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির চিফ এক্সিকিউটিভ মহেশ ব্যাস জানিয়েছেন– কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে চাকরি হারিয়েছেন ১ কোটির বেশি ভারতীয়। অতিমারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯৭ শতাংশ ঘরে আয় কমেছে। ফলে অবসাদের জেরে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। কয়েক মাস আগেই হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর উপর থেকে নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করা বছর ৩৪-এর রাজেশ গাঙ্গুলিই এই ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে– রাজেশ ডোমজুড়ের নারনা গ্রাম পঞ্চায়েতের দফরপুর মনসাতলার বাসিন্দা ছিল। বাইরের রাজ্যে সে সোনার কাজ করত। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে কাজ হারিয়ে এরাজ্যে ফিরে আসে সে। তারপর থেকে আর মেলেনি কোনও কাজ। ফলে আর্থিক অনটনের জেরে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে সে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।