দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট: শৈশব যাদের চুরি হয়ে গেছে তাদের নাম আর পাঁচটা শিশুদের মতোই। মৌসুমী, রামলাল কিম্বা ফেন্সী। তাদের বুকে আগলে রেখেছে রামপুরহাটের কাছে কুসুম্বা গ্রামের গৃহবধূ কাবেরী মাল। অনাথ শিশুদের তিনিই মা তিনিই বাপ। তিনি দুবেলা শাক ভাত যা জুটছে তাই রান্না করে শিশু দের মুখে তুলে দিচ্ছেন। তিনি বলেন,” লকডাউনের আগে এই আশ্রমকে আর্থিকভাবে অনুদান দিতেন গুজরাটের এক ব্যবসায়ী । তিনি এক বছর হলো মারা গেছেন। ওই গুজরাটি পরিবার থেকে এখন আশ্রমের এক ছেলে বা মেয়ের জন্য মাসে ৫টাকা অনুদান পাঠায়। সেই অর্থে কতটুকু হয়। তাই আমাদের কাতর আবেদন সরকারি অনুদান দিয়ে আমাদের অনাথ ছেলে মেয়ে দের বাঁচান।ওরা আধ পেটা খেয়ে বেঁচে আছে।” এই গ্রামেই মুখ্যমন্ত্রীর মামার বাড়ি। এদের কাছে পুজো উৎসব পৌঁছায় না।
এদের ঠিকানা ‘বিকাহার ইমানূল আশ্রম’। এক এক করে এখন ষাট অনাথ শিশুর পরিবার হয়ে উঠেছে সেই আশ্রম। কারো বাবা নেই। কারোর বাবা-মা কেউই নেই।
২০০৯ সালে উত্তর দিনাজপুরের এক সহৃদয় ব্যক্তি গদাধর বর্মন ও জিম বর্মন এই অনাথ আশ্রমের সূচনা করেন রামপুরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামে। নাম দেন বিকাহার ইমানূল আশ্রম। সেখানেই বীরভূম,ঝাড়খণ্ডের অনাথ শিশুদের ঠাঁই হয়। নলহাটির বোধরা গ্রামের
বছর ছয়ের মৌসুমী টুডু। ছোট বোন ফেন্সী আরও ছোট। জমিতে কাজ করার সময় এক দিনেই বাবা,মা দুজনেই বজ্রপাতে মারা যান। মুহূর্তে অনাথ হয়ে যায় দুই বোন।গ্রামের লোকজন তাদের নিয়ে আসে রামপুরহাটের এই অনাথ আশ্রমে। একই অবস্থা রাম লাল হেমবরমের । বয়স সাত বছর ।বাবা যক্ষা রোগে মারা যায়। বাড়ি বীরভূম ঝাড়খণ্ড সীমান্তে বাঁকুলী জোল গ্রামে। এদের মত ৬০ জন শিশুর ঠাঁই হয় বীরভূমের রামপুরহাটের কুসুমবা গ্রামের একটি অনাথ আশ্রমে।
বিভিন্ন সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্যে এই আশ্রমে শিশুরা দুবেলা খেতে পরতে পেতেন। এই আশ্রম মূলত দেখভাল করতেন জিম বর্মন। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই চরম অভাব অনটনে চলছে অনাথ আশ্রম। একে করোনা অতিমারীর প্রকোপ। তার উপরে আশ্রম পরিচালকের মৃত্যু তে চরম আর্থিক অনটন শুরু হয়। এই খবর জানার পর থেকেই তারাপীঠ মন্দিরের পুরোহিত সুপ্রকাশ চক্রবর্তী শিশু দের পাশে থাকার উদ্যোগ নেন। যে সব ভক্তরা তারাপীঠে পুজো দিতে আসেন তাঁদের আশ্রমের দুর্দশার কথা বলেন তিনি। অনাথ আশ্রমের শিশুদের কথা শুনে অনেকেই ওই আশ্রমের গিয়ে খাবার দিয়ে আসতেন। কেউ টাকা দিয়ে আসতেন। কিন্তু করোনা কালে দীর্ঘদিন বন্ধ তারাপীঠ মন্দির। ফলে তীর্থ যাত্রীদের আসা যাওয়া বন্ধ। ফলে এক প্রকার আধ পেটা খেয়ে দিন কাটছে শিশুদের। সুপ্রকাশ বাবু বলেন, “সামনে পুজো। চারিদিকে সাজো সাজো রব। কিন্তু অনাথ শিশুদের নতুন জামা কাপড় তো দুরের কথা। তাদের দুবেলা খাবার জুটছে না ।সকল কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
রবিবার কোলকাতার ‘‘ছন্নছাড়া’’ নামের এক গ্রুপের পক্ষ থেকে এই আশ্রমের শিশুদের জন্য খাবার নিয়ে আসে। এই ছন্নছাড়াদের পথ চেয়ে আজকের শিশুরা।