পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ ৩২ টি বই এর লেখক, ১৫ টি স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বি শেখ আলি তাঁর বিস্তর গবেষণা, বহুমাত্রিক কাজ আর স্ত্রী-সন্তানকে রেখে ইন্তেকাল করলেন। বৃহস্পতিবার মহীশূরের একটি বেসরকারি হাতপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুকে শিক্ষা জগতের নক্ষত্রপতন বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিহাসবিদ হওয়ার পাশাপাশি বি শেখ আলি ম্যাঙ্গালুরু এবং গোয়া বিশ্ববিদ্যালয়েব প্রথম উপাচার্য ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। শহরের সরস্বতীপুরম এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। টিপু সার্কেলের কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রখ্যাত এই ইতিহাসবিদের অবদান বলে শেষ করা মুশকিল। তাঁর সাফল্যের মুকুটে জুড়েছিল অসংখ্য পালক। কর্ণাটকের এবং টিপু সুলতানের ইতিহাস নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে সেখানকার ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৫ সালে প্রথম স্থান দখল করে, স্বর্ণপদক পেয়ে স্নাতক হন তিনি। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে স্নাতোকত্তর শেষ করেন। এরপর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৫৪ সালে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে পি এইচ ডি শেষ করে নতুন করে ১৯৬০ সালে লন্ডন ইনিভার্সিটি থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। চারটি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি-লিট প্রদান করেছে। ১৯৮৬ সালে ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের ৪৭ তম সম্মেলনের সাধারণ সভাপতিছিলেন। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন ইতিহাস কংগ্রেস এবং কনফারেন্সের প্রধান ছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত ইতিহাস বিষয়ক সেমিনার এবং কনফারেন্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কর্মসূত্রে ব্রিটেন সহ ১৬ টি দেশে ভ্রমণ করেছেন।
বহুমুখী প্রতিভাধর এই ইতিহাসবিদ দেশের ১২ টি গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। ৩২ টি বই এর লেখক বি শেখ আলি অনেকগুলি উর্দু সংবাদপত্রের প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দৈনিক এবং মাসিক ‘সালার’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। নিজের জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ১৫ টি স্কুল-কলেজ। এমন শিক্ষাবিদের মৃত্যুতে শিক্ষার জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন ডেপুটি চেয়ারম্যান কে রহমান খান।
টিপু সুলতানকে সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন মাদিকেরির বিজেপি বিধায়ক আপ্পাচু রঞ্জন। তাঁর মতে টিপু সুলতান দেশপ্রেমিক ছিলেন না। এই একই বক্তব্যে বারবার সরব হয়েছে বিজেপি। ২০১৫ সালে ফ্রন্টলাইনকে দেওয়া একটি ইন্টারভিউতে টিপু সুলতানের অবদান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন অধ্যাপক বি শেখ আলি। তিনি বলেছিলেন, টিপু সুলতান এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি স্বাধীন ভারতের ইতিহাস লেখার জন্য তাঁর জীবন দিয়েছিলেন। টিপু সুলতান মনে করতেন, ১০০ বছর শেয়ালের মত বাঁচার থেকে একদিন সিংহের মত বাঁচা ভালো।
প্রাক্তন সাংসদ ও পুবের কলমের সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান ইতিহাসবিদের মত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ড. বি শেখ আলি শুধু একজন স্কলার নন, তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর সঙ্গে আমার তিন চারবার সাক্ষাত হয়েছে। আজাদি সংগ্রামের নায়ক টিপু সুলতানের উপর তাঁর গবেষণা এক নতুন দিশা দিয়েছে, উপমহাদেশের রাজনীতিতে। তিনি ছিলেন শিক্ষা প্রসারের একজন পুরোধা। বি শেখ আলি পথ দেখিয়েছেন বহু ছাত্র ও গবেষককে।হিন্দু-মুসলিমকে নিয়ে এক অনুপম ভারত গড়াই ছিল তাঁর স্বপ্ন। তাঁর ইন্তেকালে আমরা এক বিশিষ্ট ঐতিহাসিক এবং শিক্ষাবিদকে হারালাম। আমি আল্লাহ্র কাছে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।’