পুবের কলম প্রতিবেদক: গত শনিবার প্রশংসা করেছিলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে। এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, তাঁর উপদেশ আমাদের কাছে আদেশ।
শনিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। তাঁর মতো বড় মাপের এক মানুষের এই মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই দেশজুড়ে চর্চা শুরু হয়ে যায়। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ যেভাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন তাতে সমস্ত রাজনৈতিক দলই নিজেদের মতো করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল যথারীতি অমর্ত্যর এই মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও বিজেপি নেতারা অমর্ত্যর এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন।
একদিকে যেমন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ অমর্ত্যকে ‘বিদেশি’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেছেন। পাশাপাশি, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান আবার বলেছেন, দেশে প্রধানমন্ত্রী পদে এখন ‘নো ভ্যাকেন্সি’। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী পদ খালি নেই দেশে।
নরেন্দ্র মোদিই দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। দেশবাসী সেটাই চাইছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তাঁর জীবদ্দশায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী দেখতে পাবেন না। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, নরেন্দ্র মোদিই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।
এই আবহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সরাসরি নোবেলজয়ী যে ‘যোগ্যতা’র কথা বলেছেন তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া না দিলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান, অমর্ত্য সেন একজন বিশ্ববরেণ্য পণ্ডিত মানুষ, আমাদের অন্যতম গর্ব। তাঁর পর্যবেক্ষণ আমাদের পথ দেখায়। তাঁর উপদেশ আমাদের কাছে আদেশ।’ একই সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন নিশ্চয় সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির উত্থান এবং গুরুত্ব অমর্ত্য সেন বুঝেছেন বলেই এই ব্যাপারে তিনি তাঁর মতামত দিয়ে সবাইকে সজাগ করতে চেয়েছেন। বিজেপি শুধু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরেই আঘাত হানছে না যে সব রাজ্যে বিরোধী দলের সরকার রয়েছে তারা সেখানে নানা ভাবে দলীয় এবং দিল্লির ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তাদের উপর ধারাবাহিক ভাবে আক্রমণ হানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে অমর্ত্য সেন তাঁর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলির আগামী কর্তব্য সম্পর্কে কিছুটা দিকনির্দেশ দিয়েছেন। সেখান থেকে আমাদের সকলেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করি।’
শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনও। তিনি বলেন, আমাদের গর্ব দেশের গর্ব বাংলার বাংলার গর্ব প্রথিতযশা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যথার্থ উপলব্ধি করেছেন যে, বিজেপির একনায়ক তন্ত্র থেকে বাঁচতে হলে যদি কোনও একটা মুখের উপর ভরসা করতে হয় তা হলে তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, এদিন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্যের করা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, অমর্ত্য সেন যে বিশ্লেষণ দিচ্ছেন তার উপর মন্তব্য করার জন্য দিলীপ ঘোষ সাহস দেখাচ্ছেন এটা দেখেই আমি বিস্মিত।
দিলীপ ঘোষের জেনে রাখা উচিত, একদলীয় শাসনের পর আমাদের দেশে বহুদলীয় শাসন কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে যে জাতীয় দলগুলি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না তার বিকল্প হিসেবে এই ছোট দলগুলির জোট উঠে আসছে। ইতিমধ্যে একাধিক নাম রয়েছে যারা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সংখ্যার থেকে এখানে বড় দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা। একাধিক রাজ্যের ছোট দলগুলি যদি জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গড়ে সেটা তো অসম্ভব কিছু নয়।