পারিজাত মোল্লাঃ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে বড়সড় আইনী জয় পেলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাদা কৃষ্ণেন্দু অধিকারী। সেইসাথে রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক ব্যক্তিগতভাবে বিপুল আর্থিক জরিমানার শিকার হলেন।রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাদা কৃষ্ণেন্দুকে পাঠানো পুলিশের নোটিস খারিজ করে কলকাতা হাইকোর্ট কার্যত তুলোধনা করল জেলা পুলিশ কে।
আদালতের নির্দেশ, -‘তাদের অনুমতি ছাড়া কৃষ্ণেন্দুকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬০ ধারায় নোটিস পাঠানো যাবে না’। এর জন্য এগরার এসডিপিওকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করলেন বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়।এদিন তিনি বলেন,-‘ নিজের পকেট থেকে ওই পুলিশ অফিসারকে টাকা দিতে হবে।তিনি উর্দির মর্যাদা রক্ষা করেননি, কারও দাসের মতো আচরণ করেছেন। এটা মেরুদণ্ডহীন কিছু পুলিশের কাজ ছাড়া কিছু নয়’।
এর পাশাপাশি এই মামলায় আগের সব নোটিশ খারিজ করে আর কোনও নোটিশ ইস্যু করা যাবে না বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বড়দা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে হয়রানির মামলায় পূর্বে মেদিনীপুরের এগরার এসডিপিও-কে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হল । বুধবার এই জরিমানা করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় ।
নির্দেশে তিনি জানান, -‘ এসডিপিও-কে নিজের পকেট থেকে এই টাকা দিতে হবে । আগামী চার সপ্তাহের বিরুদ্ধে এই জরিমানার টাকা না দিলে আদালত রুল ইস্যু করবে’ ।সেইসাথে বিচারপতি জানিয়েছেন, -‘এই মামলায় কোনও নোটিস ইস্যু করা যাবে না । আগের ইস্যু করা নোটিস খারিজ করা হল’ । এদিন এই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের তীব্র ভর্ত্সনার মুখে পড়তে হয় পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশ কে । এদিন নির্দেশে বিচারপতি আরও উল্লেখ করে জানান, -‘ একজন সাক্ষীকে এভাবে হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয় ।
পুলিশ কোনও নাগরিককে হয়রানির জন্য তৈরি হয়নি’ । এরপর বিচারপতির প্রশ্ন, -‘ সাক্ষী হিসেবে ডেকে কীভাবে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন চাইতে পারেন ?’ আদালত সুত্রে প্রকাশ, পল্লব দত্ত নামে এক ব্যাক্তি পূর্ব মেদিনীপুরে দীঘা-মেচেদা রোডের দু’ধারে যে এলইডি আলো দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ করেন । কাঁথি পৌরসভা এলাকায় ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে ওই আলোর ব্যবস্থা করা হয় । ২ থেকে ৩ কোটি টাকা খরচ করে ওই আলো রাস্তার দু’পাশে দেওয়া হয় । কিন্তু সেগুলো কোনও পরিচর্যা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ ।
তাই কাঁথি পৌরসভার তত্কালীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মামলা দায়ের করেন পল্লব দত্ত নামে ওই ব্যাক্তি । সেই সময় কাঁথি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী ।এদিন আদালতে শুভেন্দু-সৌমেন্দুদের বড়দা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীর তরফে আইনজীবী ছিলেন রাজদীপ মজুমদার । তিনি আদালতে ব্যঙ্গের সুরে বলেন, ”অভিযোগকারী মর্নিংওয়াকে গিয়ে দেখেন এবং মেচেদা বাইপাস থেকে দিঘা বাইপাসের আলোর সমস্যা নিয়ে একটি অভিযোগ জানান ।
সেই দিনই কাঁথি থানায় বিরোধী দলনেতার ভাইয়ের (সৌমেন্দু অধিকারী) নামে এফআইআর দায়ের হয়ে গেল । সেই মামলাতেই ১৬০ ধারায় নোটিস ইস্যু করে ডেকে পাঠানো হয়েছে কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে ।” ওই আইনজীবী আরও বলেন, ”পুলিশ-প্রশাসন কী জিজ্ঞাসা করতে চান?সেই প্রশ্ন দু’দিন আগে দিলে কৃষ্ণেন্দু অধিকারী বুঝতে পারবেন এবং তদন্তে সহযোগিতা করতে পারবেন ।
১৬০ এর নোটিশ দিয়ে মামলাকারীকে আইটি রিটার্নে কাগজ নিয়ে যেতে বলা হয়েছে । এই মামলায় আইটি রিটার্নের কাগজ কী কারণে প্রয়োজন ?”এরপর ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, -‘ পুলিশ যদি কোনও কিছুর তদন্তের জন্য কাউকে তলব করে, তাহলে কি তাঁর কাছে ১০ বছরের আয়কর রিটার্ন সংক্রান্ত তথ্য চাইতে পারে ? পুলিশ অযথা হয়রানি করার জন্য তাঁকে তলব করেছে ।
একজন ভারতীয় নাগরিককে এই ভাবে পুলিশ হয়রানি করতে পারে না’ ।সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান,-‘ তিনি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন’ । এরপরই ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, ”অবিলম্বে এর উত্তর চাই ।” কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী সময় দিতে আবেদন জানান ।
তারপরই বিচারপতি আরও ক্ষোভে ফেটে পড়েন । এবং নির্দেশে বলেন, ”পুলিশকে অবিলম্বে এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে নিষেধ করা হচ্ছে । না হলে আদালত কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে ।” এর পাশাপাশি পাশাপাশি এই ধরনের নোটিশ দেওয়ার জন্য এসডিপিও এগরাকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের । যদি পুলিশ আধিকারিক যদি টাকা না দেন, তাহলে ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান বিচারপতি ।
মেচেদা-দীঘা বাইপাসে ২০১৭-১৮ সালে এলইডি লাইট লাগানো নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২২ সালে শুভেন্দুর ভাইয়ের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ করা হয় পুলিশের কাছে। এসডিপিও সাক্ষী হিসেবে তাঁকে ( শুভেন্দুর ভাই) ডেকে পাঠায় নোটিস দিয়ে। তিনি আদালতে মামলা করেন।বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,-‘ চার বছর পর কেন অভিযোগকারী জেগে উঠে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন, তা বুঝতে পারছি না। মামলাকারীকে হেনস্থা করার জন্যই পুলিশের এই পদক্ষেপ। ভারতীয় নাগরিকদের হেনস্থা করার জন্য পুলিশ বাহিনী তৈরি করা হয়নি’।
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, -‘সাক্ষীর আয়করের ফাইল দিয়ে পুলিশ কী করবে। ফৌজদারি বিধির ১৬০ ধারা অনুযায়ী কাউকে ডেকে পাঠানো হলে তাঁর আয়কর ফাইলের কী প্রয়োজন, তা আদালতের কাছে স্পষ্ট নয়’।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বড়দা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে অযথা পুলিশি হেনস্তার অভিযোগ ওঠে । সেই নিয়ে মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে । বুধবার সেই মামলায় বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় এগরার এসডিপি-কেও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ।শুধু তাই নয়, এসডিপিও এগরা-কে ৫ লাখ টাকা জরিমানা নিজের পকেট থেকে এই জরিমানা দিতে হবে।