পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: হিজাবের সমর্থক প্যানেলিস্টদের আল-কায়দা সমর্থক বলে কটাক্ষ করেছিলেন বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের এক সঞ্চালক। এমন আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করল নিউজ ব্রডকাস্টিং অ্যান্ড ডিজিটাল স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি, এনবিডিএসএ। সেই অর্থে দেখতে গেলে হিজাব নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য এই প্রথম কোনও সংবাদ সংস্থার জরিমানা হল।
৬ এপ্রিল হিজাব ইস্যুতে টিভি বিতর্কের সঞ্চালনা করছিলেন ওই সঞ্চালন। সেখানেই বিতর্কে যোগ দেওয়া এক প্যানেলিস্টের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো জাওয়াহিরি গ্যাং-এর সদস্য। জাওয়াহিরি আসলে আপনাদের দূত। জাওহারিকে তো আপনারা ঈশ্বর মনে করেন। আপনারা সবাই তার ভক্ত।’
এনবিডিএসএ বলেছে, ওই সঞ্চালক যে কেবল মুখে এসব কথা বলেছিলেন তা নয়, ওই বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম হিজাবের বিরুদ্ধে কুরুচিকর প্রচার চালিয়েছিল সোশ্যাল সাইটে। ট্যুইটারে ট্রেন্ডিং করার চেষ্টা হয়েছিল ‘হ্যাশট্যাগ আল-কায়দা গ্যাং এক্সপোজ’। ‘হিজাবকে ফাটা পোস্টার, ‘নিকলা আল-কায়দা।’
‘হিজাবের পিছনে আল জাওয়াহিরি’। ‘হিজাব বিতর্ক আল-কায়দার তৈরি।’ বেমালুম এমন কুৎসা প্রচার করা হয়েছিল। তাকে কারা হাতিয়ার করেছিল, তা আজ আর জানতে বাকি নেই কারও। বুধবার বিবৃতি প্রকাশ করে এনবিডিএসএ বলেছে, যারা খবর সম্প্রচার করছে তাদের এমন প্রবণতা মারাত্মক। কোনও একটি সম্প্রদায়ের মানুষকে এইভাবে আল-কায়দার সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার তীব্র নিন্দা করেছে এই সংস্থাটি।
যেভাবে প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে নিশানা করা হয়েছে তারও নিন্দা করা হয়েছে। এনবিডিএসএ বলেছে, সংবাদ সঞ্চালক যে কেবল সংবাদ সম্প্রচারের নীতি, তার মূল্যবোধ কিংবা সংবাদ সম্প্রচারের নির্দেশিকার অবমাননা করেছেন তা নয়, একইসঙ্গে এ বিষয়ে বোম্বে হাইকোর্টের রায়েরও অবমাননা করেছেন তিনি।
টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত বিতর্কসভায় ঘৃণা, ভাষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে অনুষ্ঠানের সঞ্চালককে। মামলার পর্যবেক্ষণে সে প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সরকার এই সব বিষয়ে নীরব দর্শক হয়ে আছে কেন, একইসঙ্গে সেই প্রশ্নও তুলেছিল শীর্ষ আদালত।
বুধবার ওই বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে জরিমানা করে সংবাদ সঞ্চালকের ভূমিকার কথা ফের মনে করিয়ে দেয় নিউজ ব্রডকাস্টিং অ্যান্ড ডিজিটাল স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি।
৬ এপ্রিল যে টিভি বিতর্ক হয়েছিল, তাতে প্যানেলিস্টরা কেউ কেউ হিজাব নিয়ে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। চাইলে সঞ্চালক তা রুখতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা বন্ধ না করে বরং তাতে ধোঁয়া দেন। ফলে হিজাব নিয়ে যাঁরা কুকথা বলেছিলেন, তাঁরা আরও উৎসাহী হয়ে ওঠেন। টিআরপিটি বাড়ানোর চক্করে এবং বিদ্বেষীদের খুশি করার জন্য আমান নিজেও পক্ষপাত নেন।
কর্নাটকের হিজাব মামলা এখন শীর্ষকোর্টে। বিভাজিত রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি। বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত পৃথক রায় দেন। হিজাব বিতর্ক নিয়ে কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ে অসন্তুষ্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলাকারীরা। বিচারপতি হেমন্ত কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ের পক্ষে মত জানিয়ে আবেদন খারিজ করে দিলেও সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারার উল্লেখ করে বিচারপতি ধুলিয়া মুসলিম ছাত্রীদের আবেদনের যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছেন। হিজাব পরার ব্যক্তিগত অধিকারকেও স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি।