বিশেষ প্রতিবেদন: এই প্রথমবারের মতো মুসলিম কোনও দেশে বসেছে ফিফা বিশ্বকাপের আসর। এ বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কাতারকে অনেক সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। তবে সব কিছুকে পেছনে ফেলে তারা সাফল্যের সঙ্গেই এগিয়ে চলছে।
দেশটির প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ জনগণও মনে করছে, এ বিশ্বকাপ লক্ষ লক্ষ মানুষকে ইসলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ, ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মন থেকে ভুল ধারণা দুর করার উপযুক্ত সময়। এরই মধ্যে আয়োজক দেশ কাতার আগত বিদেশি ফুটবলভক্তদের জন্য ইসলামকে জানার সুযোগ করে দিয়েছে।
এছাড়া বেসরকারিভাবেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আগত দর্শনার্থীদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। দোহার কাটরা সাংস্কৃতিক জেলার বিখ্যাত নীল মসজিদে গাইডরা আগত দর্শনার্থীদের ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত করছেন।
আরবি কফি ও খেজুর দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করছেন এবং ইসলাম সম্পর্কিত বিভিন্ন বই তাদের উপহার দিচ্ছেন। এ মসজিদে ইসলাম সম্পর্কে পাঁচ মিনিটের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ট্যুরও দেখতে পারছেন দর্শকরা।
এক গাইড জানান, এই নীল মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ সারা বিশ্ব থেকে কয়েক ডজন মুসলিম প্রচারককে কাতারে নিয়ে এসেছে। সিরিয়া থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবক জিয়াদ ফাতেহ বলেন, ‘বিশ্বকাপ হল লক্ষ লক্ষ লোককে ইসলামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি সূবর্ণ সুযোগ। পশ্চিমারা যেভাবে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে, সে ধারণা পাল্টে দেওয়ার একটি সুযোগ। আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে তাদের সন্দেহ ও ভুল ধারণা দুর করছি।’
সুমাইয়া নামে ফিলিস্তিনি এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘পর্দা, বহুবিবাহ ও ইসলামে নারীদের অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন। এ সব নিয়েই তারা অধিকাংশ প্রশ্ন করে থাকেন। আমরা ইসলামে নারীদের অধিকার ও অবস্থান সম্পর্কে তাদেরকে পুরোপুরিভাবে অবহিত করার চেষ্টা করছি।’
কাতার ইউনিভার্সিটির শরিয়া আইনের অধ্যাপক সুলতান বিন ইব্রাহিম আল হাশেমি বলেন, ‘বিশ্বকাপকে ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় ব্যবহার করা উচিত। যদি আমি সুযোগ পাই, আমি তাদের স্বাচ্ছন্দ্য ও অনুগ্রহের সাথে ইসলামের প্রস্তাব দেব এবং যদি সে সুযোগ নাও পাই, সেক্ষেত্রে আমি তাদের বলব, আপনারা আমাদের অতিথি ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ।’ তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইসলাম জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হওয়াকে মেনে নেয় না।’
এদিকে কাতারের এ আয়োজন সম্পর্কে ২১ বছর বয়সী ক্রোয়েশিয়ান পেত্র লুলিক মন্তব্য করেছেন, ‘ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য এটি খুব সুন্দর একটি সুযোগ। তিনি তার পরিবারসহ ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার জন্য কাতারে এসেছেন।’
কাতারের পার্ল জেলায় প্রচুর প্রবাসী বাস করেন। সেখানকার ক্যাফে ও রেস্তোরাঁয় বিদেশিদের যাতায়াত রয়েছে। এ সব এলাকায় নৈতিকতার আহ্বান সংবলিত নবী সা.র হাদিসের ম্যুরাল আঁকা হয়েছে। দামী শপিং মলগুলোতে ইসলাম প্রচারে নানা মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার দোহার ওয়াকিফ বাজার এলাকায়, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করে, সেখানেও বিনামূল্যে বেশ কিছু ইসলামিক বই রেখে দেওয়া হয়েছে।
পাশে লেখা রয়েছে, যদি আপনি সুখের সন্ধান করেন, তাহলে ইসলামেই আপনি এটা পাবেন। এ বাজার এলাকার কাছেই শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার দিনের ১২ ঘণ্টা খোলা থাকছে। অমুসলিমরা সেগুলো পরিদর্শন করছেন, ইসলাম সম্পর্কে জানছেন।
এরই পাশাপাশি মুসলিমদের মধ্যে একতা ও নামাযের প্রতি তাঁদের নিষ্ঠা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন অমুসলিমরা। আযানের পবিত্র ধ্বনি শোনার পর বিদেশিদের চিন্তা-ভাবনায় বদল আসতে শুরু করেছে।