উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,সুন্দরবন : সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু (Death by tiger attack in Sundarbans) মিছিল অব্যাহত। আবারও বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবির। মৃতের নাম দীপক মন্ডল(৫৭)।মৃত মৎস্যজীবির বাড়ি গোসাবার কুমিরমারী পঞ্চায়েতে কুমিরমারি মৃধা পাড়ায়।স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে কুমিরমারি মৃধা পাড়ার বাসিন্দা মৎস্যজীবি দীপক মন্ডল ও তার ভাই মন্টু মন্ডল, ভোলা মন্ডল ও এক প্রতিবেশীকে নিয়ে গত ২৯ শে জানুয়ারী সুন্দরবন জঙ্গলের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন।
গত প্রায় ৬ দিন ধরে তারা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরছিলেন।রবিবার সকাল ১০ টা নাগাদ সুন্দরবনের ভাইঝুরি নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরছিলেন। সেই সময় সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ দীপক মন্ডল কে টার্গেট করতে থাকে।এদিকে চার মৎস্যজীবি আনমনে নদীতে কাঁকড়া ধরার দ্রোণ ফেলতে ব্যস্ত।আচমকা সুন্দরবন জঙ্গল থেকে দ্রুত গতিতে বাঘ বেরিয়ে আসে।মুহূর্তে সকলের অলক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে দীপকের ঘাড়ে।ঘাড় মটকে তাকে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এদিকে ওই মৎস্যজীবির ভাই মন্টু মন্ডল বাঘ দেখে প্রাণ ভয়ে সুন্দরবন জঙ্গলের একটি গাছের মগডালে উঠে পড়ে। অপর দুই মৎস্যজীবি দূরে জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
বাঘ তার শিকার নিয়ে একটু গভীর জঙ্গলে যেতেই মন্টু মন্ডল গাছ থেকে নেমে দুই সঙ্গী কে নিয়ে বাঘের কবল থেকে দাদা কে উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়।গাছের ডাল ভেঙে বাঘের পিছু নিয়ে তাড়া করে।বাঘ তার শিকার ছাড়তে নারাজ।রুদ্রমূর্তি ধরে বাঘ তিনজন মৎস্যজীবির সামনে রুখে দাঁড়ায়।দীর্ঘ প্রায় ঘন্টাখানেক চলে বাঘে মানুষের লড়াই।
অবশেষে তিন মৎস্যজীবির প্রতিরোধের মুখে পড়ে বাঘ শিকার ছেড়ে গর্জন করতে করতে পিছু হটতে থাকে।পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে একসময় বাঘ ভয় পেয়ে দৌড়ে সুন্দরবনে গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায়।তিন মৎস্যজীবি বাঘের কবল থেকে সঙ্গীকে উদ্ধার করে নৌকায় তোলেন। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের ফলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই মৎস্যজীবি।
দীর্ঘ প্রায় ৩০ ঘন্টা নৌকা চালিয়ে সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ মৃত মৎস্যজীবির দেহ নিয়ে কাকমারি ঘাটে পৌঁছায় সঙ্গীসাথীরা। সেখান থেকে বনদফতর মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় সুন্দরবন কোষ্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
বুধবার মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয় বলে পুলিশ সুত্রের খবর।অন্যদিকে মৃত মৎস্যজীবির স্ত্রী সুনন্দা ও দুই মেয়ে ঝুমা ও রীমা।বড় মেয়ে ঝুমার বিয়ে হয়ে গেলেও ছোট মেয়ে রীমা বর্তমানে স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী।আচমকা দুর্ঘটনার কথা শুনে শোকে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের সকলেই।
মৃতের স্ত্রী সুনন্দার দাবী, বৈধ পাশ নিয়ে সুন্দরবন জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল।বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল জঙ্গল থেকে ফিরে এসে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবে।সেটা আর হল কই?’অন্যদিকে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় মন্ডল পরিবার সহ সমগ্র কুমিরমারি মৃধাপাড়া এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বন দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে এক মৎস্যজীবির মৃত্যু হয়েছে।মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।আর মৃত মৎস্যজীবির পরিবারের হাতে দ্রুত সরকারি ক্ষতি পূরণের টাকা তুলে দেওয়ার দাবি জানালেন এপিডিআর সংগঠনের দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার সহ সম্পাদক মিঠুন মন্ডল।
তিনি বুধবার বলেন, বারবার একই ঘটনা ঘটে চলেছে।বিকল্ল কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবনের মৎস্যজীবিরা জঙ্গলে চলে যায় রোজগারের আশায়। তাই তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দিকে সরকারের নজর দেওয়ার দরকার। পাশাপাশি এদের মৃত্যুর পরে ক্ষতিপূরণ নিয়ে সরকারের টালবাহানা করলে চলবে না।দ্রুত তাদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দিতে হবে।
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.21-PM.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM-1.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM.jpeg)