নয়াদিল্লি: ২৩ বছর বয়সি পিঙ্কি বহু লড়াই করেছেন তার জীবনে৷ আর তিনি পিছনে ফিরে তাকাতে চান না৷ লাভ জিহাদের অভিযোগ তুলে তাকে ও তার স্বামী রশিদকে চরম হেনস্তা করা হয়েছে৷ আর নয়৷ এবার সুখের সময়৷ পিঙ্কি গর্ভপাতে তার সন্তানকে হারিয়েছে এক বছর পেরিয়ে গেল। তার স্বামী রশিদ তখন তাকে সান্ত্বনা দিতে পারেননি৷ তিনি উত্তরপ্রদেশের বেআইনি ধর্মান্তরকরণ আইন, ২০২০-এর অধীনে তখন কারাগারে ছিলেন৷ এই আইন ‘লাভ জিহাদ আইন’ হিসাবে পরিচিত৷ পিঙ্কিকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা এবং বিয়ে করার অভিযোগে তাকে জেলে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু অবশেষে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন৷ লাভ জিহাদের নামে মুসলিম যুবকদের যে হয়রান করা হচ্ছে, তার প্রমাণ পিঙ্কি-রশিদের এই ঘটনা৷ এখন পিঙ্কি এবং রশিদ দেরাদুনে তাদের জীবন পুনরায় গড়তে ব্যস্ত৷ উত্তরাখণ্ডের এই শহর যেখানে তারা ২০১৯ সালে প্রথম প্রেমে পড়েছিল এবং তাদের বাকি জীবন একসঙ্গে কাটানোর শপথ করেছিল।
এই দম্পতির অগ্নিপরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত বছরের ৫ ডিসেম্বর, যখন তারা তাদের বিয়ে নিবন্ধন করার চেষ্টা করেছিল৷ ওই দিন রশিদকে পুলিশ ধরে নিয়ে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখে। প্রমাণের অভাবে ১৫ দিন পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, কিন্তু তাদের জীবন ইতিমধ্যেই উলটপালট হয়ে গিয়েছে। পিঙ্কির মতে, হিন্দু দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী বজরং দলের সদস্যরা তাকে ধাক্কা দেয় এবং হেনস্থা করে৷ যদিও সে জানিয়েছিল, সে তার স্বাধীন ইচ্ছায় মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করেছে এবং তিন মাসের গর্ভবতী। এর পর তাকে একটি নারী নিকেতনে (নারী আশ্রয়কেন্দ্র) নিয়ে যাওয়া হয়৷ তিনি অভিযোগ করেন যে সেখানে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় এবং তার গর্ভপাত হয়েছিল। পিঙ্কি ও রশিদের মামলাটি বিতর্কিত আইনের অধীনে ১১টি মামলার মধ্যে একটি যেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণের অভাবে ইউপি পুলিশ একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত বন্ধের ইঙ্গিত দেয়। এই আইনে এ পর্যন্ত মোট ১০৮টি মামলা হয়েছে।
পিঙ্কি এবং রশিদ বলছেন যে তারা দেরাদুনে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে শান্তিতে বসবাস করছেন৷ তাদের মোরাদাবাদে ফিরে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই৷ সেখানে পিঙ্কির পরিবার থাকে। রশিদ জানান, আমাদের কখনও ফিরে যাওয়ার এবং মোরাদাবাদে বসতি স্থাপনের কোনও ইচ্ছে নেই। আমরা সেখানে শুধু ঘৃণা পেয়েছি৷ আব খুশ হোনে কি কোশিশ কর রহে হ্যায়…জো ছিনা থা, ও তো ছিন লিয়া। আব না হোনে দুঙ্গা অ্যায়সা (আমরা সুখী হওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের কাছ থেকে যা ছিনিয়ে নেওয়ার তা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর এমন হতে দেব না)৷