‘মহিলাদের ওপর নির্মমতা, বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবধিকার লঘ্নন’, দেশের সরকার সহ সকলকে একজোট হওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের
বিশেষ প্রতিবেদন: প্রতি ১১ মিনিটে পরিবারের সদস্য, প্রিয় সঙ্গীর হাতে খুন হচ্ছে একটি মেয়ে, এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরল রাষ্ট্রসংঘ। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ভারতে হওয়া শ্রদ্ধা ওয়াকার খুনের ঘটনার কথা তুলে ধরে এইভাবেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেন, শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতা জনমানসে আতঙ্কের ছাপ ফেলেছে। মানুষের মধ্যে এই ঘটনা আলোড়ন তৈরি করেছে, যার প্রভাব ক্ষতিকর। এই ধরনের ঘটনার বিস্তার মানুষের মনে সুদূরপ্রসারী আতঙ্কের রেশ ধরে রাখতে পারে। এই নির্মমতা, নৃশংসতার বিরদ্ধে সকলকে এবার একজোট হয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দাবি করেন, প্রতি ১১ মিনিটে একজন মহিলা বা মেয়েকে তার অন্তরঙ্গ সঙ্গী বা পরিবারের হাতে খুন হতে হচ্ছে। যা ভয়াবহ ঘটনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। শ্রদ্ধা ওয়াকার খুনের ঘটনার ইঙ্গিত দিয়ে গুতেরেস বলেন, মহিলাদের ওপরে নির্যাতনের ঘটনা বিশ্বে সবচেয়ে বড় মানবধিকার লঙ্ঘন। এই ধরনের হিংস্রতা মোকাবিলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারগুলিকে আহ্বান জানান রাষ্ট্রসংঘের প্রধান। আগামী ২৫ নভেম্বর ‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস’-এর আগেই এই মন্তব্য করলেন গুতেরেস। মহিলাদের প্রতি নির্মমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গুতেরেস বলেন, মহিলাদের প্রতি হিংস্রতা এই মুহূর্তে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করোনা মহামারির সময়ে শয়ে শয়ে মানুষের মৃত্যু, এর জেরে অর্থনৈতিক বিপর্যয় মানুষের ওপরে প্রভাব ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে মহিলাদের ওপরে নির্যাতনের ঘটনা সমাজে অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করছে।
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব সোশ্যাল মাধ্যমে মেয়েদের হেনস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে মহিলারা হেনস্থা, যৌন হয়রানি, কুপ্রস্তাব, কুরুচিকর মন্তব্যের শিকার। মহিলাদের প্রতি এই ধরনের বৈষম্য, হিংস্রতা, অশ্লীল মন্তব্যের কারণে সমাজকে এর জন্য একটা সময় বড়সড় মূল্য চোকাতে হবে।
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব গুতেরেস মহিলাদের এইভাবে অবমাননা তাদের জীবনে চলার পথে বাধা, মৌলিক চাহিদা, স্বাধীনতা খর্ব করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বিশ্বের বিকাশ, উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপ্রধানের মহাসচিব ‘মহিলা ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ইতিহাসের বইয়ে তুলে ধরার জন্য’ সকলকে স্পষ্ট আহ্বান জানিয়ে বলেন, মহিলাদের বিরুদ্ধে এই নির্মমতা, অত্যাচার রোধ করার প্রকৃত সময় এসেছে। সকলকেই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার এই দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি পর্যায়ে তৃণমূল এবং সুশীল সমাজ গোষ্ঠীকে জড়িত করুক। পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ, সম্মান, ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২০২৬ সালের মধ্যে মহিলাদের অধিকারের জন্য গড়ে ওঠা সংগঠন এবং আন্দোলনে ৫০ শতাংশ তহবিল বাড়ানোর জন্য সরকারগুলির প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রসংঘের প্রধান গুতেরেস।
রাষ্ট্রসংঘের প্রধান সকলকে ‘মহিলাদের অধিকারের সমর্থনে আওয়াজ তুলতে’ এবং স্বগর্বে নিজেদের ‘”আমরা সবাই নারীবাদী’ বলার আহ্বান জানান। পিতৃতান্ত্রিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে মহিলাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার কথা বলেন তিনি। গুতেরেস দাবি করেন, আন্তর্জাতিক দিবসের থিম হওয়া উচিৎ ‘একত্রিত’। মহিলা ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে সক্রিয়তা’ প্রসঙ্গে গুতেরেস বলেন, বিশ্বজুড়ে সেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ, যারা প্রতিনিয়ত সংহিসতার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।