পুবের কলম প্রতিবেদকঃ রবিবার পার্ক সার্কাসের একটি হলে আমানত ফাউন্ডেশন আয়োজিত ছাত্রছাত্রীদের এসটিইএম (স্টিম) স্কলারশিপ বিতরণ ও একটি আলোচনা চক্র অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন তাজ এন্ড জাকির সৈয়দ ফ্যামিলি চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের সভাপতি জনাব তাজ সৈয়দ, পুবের কলম এর সম্পাদক তথা সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, ডা. এম এন হক, আমানত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ আলম প্রমুখ।
এদিনের অনুষ্ঠানে তাজ এন্ড জাকির সৈয়দ ফ্যামিলি চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তাজ সৈয়দ ছাত্রছাত্রীদের নিয়মানুবর্তিতার উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। জনাব তাজ সৈয়দ একজন মার্কিন প্রবাসী টেকনোক্র্যাট। কিন্তু তাঁরা আমেরিকায় গিয়েও দেশকে ভোলেননি। তাই জনাব তাজ সৈয়দ ও তাঁর আত্মীয়রা মিলে তৈরি করেছেন এই ট্রাস্ট। তাঁরা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রদের কলকাতা, হায়দরাবাদ, পাটনা প্রভৃতি শহর থেকে স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। তাজ সৈয়দ ছাত্রছাত্রী উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, তাঁর পিতার বক্তব্য ছিল ‘জো শিখে নেহি’ উসসে শিখাতে চলো’।
মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। আর এটাও অন্যতম ইবাদত। দুনিয়াতে ইনশানকেই ইনশানের কাজে আসতে হবে। যেখানে অন্ধকার সেখানে রোশনী আনতে হবে। একটি চিরাগ জ্বালালেও আঁধার খানিকটা তো দূর হবেই। সব সময় উন্নতি ও পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে। যেখানে ছিলাম সেখানে থেকে যাওয়াটা কোনও কাজে কথা নয়। তিনি আরও বলেন, সময়কে কাজে লাগাতে হবে। শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। আর ছাত্রছাত্রীরা যেন নিজেদের আচার ব্যবহার ও কাজকর্মকে অর্গানাইজ করতে পারে। জনাব তাজ ইকবালের কবিতা উদ্ধৃত করে আরও বলেন, তারা স্কুলে চমৎকার সব দোয়া (আল্লাহর কাছে প্রার্থনা) শিখেছিলেন, যা আজও কাজে আসে।
পুবের কলম-এর সম্পাদক তথা সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের ছাত্রছাত্রীরাই পারে ইতিহাস সৃষ্টি করতে। বাংলার মুসলিম পড়ুয়ারা শিক্ষায় এখন এগিয়ে এসেছে। বহু মিশন স্কুল গড়ে উঠেছে। শুধুমাত্র একটি মিশন স্কুল থেকে প্রতি বছর ৪০০’র বেশি ছাত্রছাত্রী ডাক্তারিতে সুযোগ পাচ্ছে। রাজ্যে ৬১৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। এই মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, মুসলিমরাই শিক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের পথিকৃৎ। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, রসায়ন, দর্শন প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলিরাই দুনিয়াকে সবক দিয়েছে। ইবনে সিনা, আল রাজি-র মতো শত শত বিজ্ঞানী ছিলেন, যাঁরা আধুনিক শিক্ষার ‘পায়োনিয়ার’। সেই ইতিহাস পড়ুয়াদের জানতে হবে।
শুধু পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষা লাভই নয়, পড়ুয়াদের উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পর সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আহমদ হাসান ইমরান আরও বলেন, শিক্ষার উন্নয়নই দেশের সার্বিক উন্নয়ন আনতে পারে। তিনি বলেন, আমানত ফাউন্ডেশন, তাজ আইডিবি-এর খিদমতের কথা মনে রাখতে হবে। ইমরান বলেন, মেয়েরাই পরিবার ও সমাজ গড়ে। তাদের শিক্ষা ও উন্নয়নের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার বিভিন্ন ফাউন্ডেশন এবং বিদেশ থেকেও প্রচুর স্কলারশিপ পাওয়া যায়। তার সুযোগও ছাত্রছাত্রীদের নিতে হবে।
আমানত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, বহু পড়ুয়াকে আমানত স্কলারশিপ প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে।
ডা. এম. এন হক বলেন, ডাক্তারির পাশাপাশি বিভিন্ন চাকরিমুখী প্যারামেডিক্যাল কোর্স রয়েছে। প্যারামেডিক্যালে স্নাতক কোর্স শুরু হয়েছে, এতে চাকরির ক্ষেত্র বাড়বে। পাশাপাশি তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
পার্ক সার্কাসে আয়োজিত সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আরিফ নাসরুল্লাহ। এদিন বিভিন্ন জেলা থেকে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্টসহ সাধারণ কোর্সের কৃতী ছাত্রছাত্রীদের প্রায় ৩০টি স্কলারশিপ ও সার্টিফিকেট তুলে দেন উপস্থিত বিশিষ্টরা।