পুবের কলম প্রতিবেদক: লোকসভা নির্বাচনের সময় অবৈধ নগদ টাকার সরবরাহ সনাক্ত করতে প্রথমবার বিভিন্ন আর্থিক সংস্থাগুলিকে যুক্ত করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই তালিকায় রয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), আয়কর বিভাগ (আইটি) এবং রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিআরআই)। মূলত: অবৈধ আর্থিক লেনদেনের তদন্ত করতে এবং যে সমস্ত জায়গায় এধরনের আর্থিক লেনদেন বেশি হয় সেই জায়গা চিহ্নিত করতে এই সংস্থাগুলিকে যুক্ত করেছে কমিশন। মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আয়োজিত একটি সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো আমরা নির্বাচনে ব্যবহৃত অবৈধ অর্থের লেনদেনের তদন্ত করতে ইডিকে নিযুক্ত করেছি। এই সংস্থা আইটি এবং ডিআরআই সহ অন্যান্য ২০টি সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। এরা আন্তর্জাতিক সীমানা দিয়ে অবৈধ নগদ লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত করবে এবং ব্যাঙ্কিং লেনদেনের উপরেও নজর রাখবে।’
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনে অবৈধ তহবিল বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এর সংযোজন উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮.৯৩ কোটি টাকার অবৈধ নগদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে, যা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বেড়ে হয়েছে ৪৪.৩৩ কোটি এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে আরও বেড়ে হয়েছে ১১৮.০৪ কোটি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও এই প্রবণতা অব্যাহত ছিল, বাজেয়াপ্ত তহবিলের পরিমাণ বেড়ে ৩০০.১১ কোটিতে পৌঁছেছে।
কমিশনের এক বরিষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাকে আর্থিকভাবে অ-সংবেদনশীল রাজ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল কিন্তু গত দুটি নির্বাচনে, বাজেয়াপ্তের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি ছিল এবং তাই কমিশন রাজ্যে অবৈধ আর্থিক প্রবাহের দিকে নজর দেওয়ার জন্য ইডিকে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইডি ইসিআই দ্বারা নির্ধারিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হল রাজ্যে অবৈধ আর্থিক প্রবাহের তদন্ত ও সমাধান করা।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার মুখ্য সচিব বি পি গোপালিকা এবং ডিজি রাজীব কুমারের সাথে দেখা করেন। তার আগে সোমবার রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজীব কুমার। তারপরেই সাংবাদিক বৈঠকে সাফ জানিয়ে দেন, কমিশন কোনও ধরণের পক্ষপাতিত্ব সহ্য করবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্রের মধ্যে সম্ভাব্য পক্ষপাত সম্পর্কে সচেতন, বিশেষ করে নিম্ন স্তরে। যেকোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ গ্রহণ করা হবে না। আমরা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা যদি তা মানতে ব্যর্থ হয়, আমরা করব। যদি, আমাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তারা তাদের কর্মে অবিচল থাকে, আমরা সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা নেব।’