পুবের কলম প্রতিবেদক, দুর্গাপুর: পশ্চিমবাংলার অন্যতম আধুনিক শিল্পাঞ্চল এবং প্রাণবন্ত শহর। এখানকার দু’টি সংগঠন ‘দুর্গাপুর মজলিশে মিল্লাত’ ও ‘দুর্গাপুর মুসলিম ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র যৌথ উদ্যোগে ১ মে এই শহরে প্রথম পালিত হল ঈদ মিলন উৎসব। ঈদের খুশি ও সম্প্রীতির বার্তা ছুঁয়ে গেল হিন্দু, মুসলিম, শিখ, জৈন ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষজন ও নেতৃবৃন্দকে।
এই মিলন উৎসবে এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, এলাকার সাংসদ সুরেন্দ্র সিং আলুয়ালিয়া, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট ও আইএসপির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ বীরেন্দ্র প্রতাপ সিং, রাজ্যসভার সাবেক সদস্য ও ‘পুবের কলম’ দৈনিকের সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, দুর্গাপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখার্জি, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, এসবিএসটিসির চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল, কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভ্রাতুষ্পুত্র রেজাউল করিম ও নাতনি সোনালি, ডা. অরুণাংশু গাঙ্গুলি, খায়রোজ মণ্ডল, আইনজীবী আইয়ুব আনসারি, এম আমিরুল প্রমুখ।
এ ছাড়া ছিলেন বৌদ্ধ, জৈন প্রতিনিধি ও রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ। তালিকা দেখেই বোঝা যায়, সব অর্থেই সব ধর্মের মানুষ দুর্গাপুরের এই ঈদ মিলনে শামিল হয়েছিলেন।
শ্রোতা-দর্শক ও বক্তারা সকলেই ঈদ মিলনের এই সম্প্রীতির পয়গামের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ‘আনন্দ একা হয় না। কাজেই ঈদের খুশিকে সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিলেই প্রকৃত অর্থে মানুষে মানুষে মিলন হবে। এই অনুষ্ঠানে তাই হচ্ছে। পিতৃবিয়োগের পর অশৌচ অবস্থায় যেভাবে বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন, তা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, তাঁর উপস্থিতিই হচ্ছে সৌহার্দ্র্যের এক বড় নজির। ইমরান আরও বলেন, ইসলামে নবী সা. বলেছেন, তুমি যদি পেট ভরে খাও আর তোমার প্রতিবেশী যদি ক্ষুধার্ত থাকে তবে সেই মুসলিম মোটেই ঈমানদার নয়। এখানে প্রতিবেশী বলতে সকলকেই বুঝিয়েছে। মুসলিম বা অমুসলিমকে আলাদা করা হয়নি। ইমরান আরও বলেন, ভারতবর্ষের সংবিধান সকল নাগরিককে সমান অধিকার দিয়েছে।
সাংসদ সুরেন্দ্র সিং আলুয়ালিয়ার বক্তব্য উল্লেখ করে ইমরান বলেন, ভারত প্রকৃতই একটি গুলবাগিচা বা পুষ্প-উদ্যান। সব ধর্মের ফুল নিজেদের খুশবু ও রঙে প্রস্ফুটিত হলেই এর শোভা, এর সৌন্দর্য। এই ভারতবর্ষে আজ মানুষে মানুষে বিভাজনের চেষ্টা তুঙ্গে উঠেছে। ভারতবর্ষের চেতনাকেই আমরা কোনও মতেই বিনষ্ট হতে দেব না।
সুরেন্দ্র সিং আলুয়ালিয়াও মিলন মঞ্চ থেকে ঐক্যের কথা বলেন। বলেন, ইনসানিয়াতের কথা। তিনি শিখ ধর্মের শ্রদ্ধাভাজন মুসলিম সুফি বাবা ফরিদের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে ঈশ্বরের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখার আহ´ান জানান।
দুর্গাপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখার্জিও নাগরিকদের মধ্যে প্রীতি-ভালোবাসার উপর গুরুত্ব দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ‘দুর্গাপুর মজলিশে মিল্লাত’-এর ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট খায়রোজ মণ্ডল।
দ্বিতীয়ার্ধে ছিল প্রখ্যাত শিল্পী সলমন আলি। তিনি সারেগামা বিজেতা। হরিয়ানার মেওয়াত অঞ্চলে এই শিল্পীর পরিবার চার প্রজন্ম ধরে সুফি সংগীতের চর্চা করে আসছেন। তরুণ এই শিল্পীর গান শুনতে হাজির ছিলেন দুর্গাপুরের বহু মানুষ। সলমন আলি তাঁর সংগীত পরিবেশনে দুর্গাপুরবাসীদের মনজয় করে নেন। অনেককেই বলতে শোনা যায়, আমরা এই ধরনের অনুষ্ঠান এবার থেকে প্রতি বছর পেতে চাই।