পুবের কলম ডেস্ক:
কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশের চাপের কারণে ‘গরু জবাই বিরোধী আইন’ বাতিল করার জন্য একটি বিল আনার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কর্ণাটক সরকার। রাজ্যের প্রবীন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন। এদিকে, রাজ্য মন্ত্রিসভা বিজেপি কর্তৃক পাস করা ধর্মান্তর বিরোধী আইন বাতিলের অনুমোদন দিয়েছে এবং চলতি বিধানসভা অধিবেশনে কর্ণাটকের বিধানসভায় একটি বিল পেশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্ণাটক কংগ্রেস সরকার ২০২০ সালে বিজেপি কর্তৃক প্রবর্তিত গবাদি পশু হত্যা বিরোধী আইনকে বাতিল করার প্রস্তাব নিয়ে বিজেপির চাপের মধ্যে রয়েছে।বিজেপি বলছে,কেন কংগ্রেস বিজেপির গোহত্যা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করেছে? কর্ণাটক প্রিভেনশন অফ স্লটার অ্যান্ড প্রিজারভেশন অফ ক্যাটেল অ্যাক্ট, ২০২০ অনুসারে রাজ্যে গরু জবাইয়ের উপর প্রায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আগের বিজেপি সরকার। এখন নতুন করে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেই এই আইন প্রত্যাহারের কথা চিন্তা ভাবনা করছে। কিন্তু কেন? কংগ্রেস সরকারের পশুপালন মন্ত্রী কে ভেঙ্কটেশ ইতিমধ্যেই এক বিবৃতিতে বলেছেন,“রাজ্যে যদি মহিষ ষাঁড় জবাই নিষিদ্ধ না হয় তাহলে গরু জবাই বা কেন নিষিদ্ধ হবে”?
কংগ্রেস দল তার নির্বাচনী ইস্তেহারেই তার মনোভাব স্পষ্ট করেছে। দলের তরফে আগেই বলা হয়েছিল ২০২০ সালের আইন চাষীদের অনেক অসুবিধার মুখে ফেলেছে সেই কারণে তারা গোহত্যা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে চায়।
বিরোধী কংগ্রেস এবং জেডিএসের আপত্তি সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের রাজ্য বিধানসভা এবং কাউন্সিলে পাস হওয়ার পরে আইনটি ২০২১ সালে কার্যকর করে। রাজ্যে সব ধরনের গবাদি পশু হত্যা নিষিদ্ধ করার জন্য এটি একটি কঠোর আইন। আইনের বিরোধিতায় প্রথম থেকেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিরোধী দল কংগ্রেস। আইন অনুসারে রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ। ১৩ বছরের বেশি বয়সী মহিষকে শুধুমাত্র জবাই করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এই আইনে। অবৈধ বিক্রি, চোরাচালন আর ‘গোহত্যা’কে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে এবং এই কাজের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে আইনে।
নতুন আইনে আইন লঙ্ঘনের শাস্তি তিন থেকে সাত বছরের জেল বা ৫০,০০০ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা জেল ও জরিমানা উভয়ই। ১৯৬৪ সালের আইন অনুসারে, সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। নতুন আইনে গবাদি পশুর বেআইনি পরিবহন, মাংস বিক্রয় এবং জবাইয়ের জন্য গবাদি পশু ক্রয়ের ওপরেও রয়েছে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।
গরু জবাই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কৃষক সম্প্রদায়ের সুপ্ত ক্ষোভ ছিল। সেই সঙ্গে সার এবং পশুখাদ্যের আকাশছোঁয়া দাম, কৃষকের আর্থিক ক্ষতি চলতি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল। এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেতা সিদ্দারামাইয়া। তিনি বলেছিলেন, “গবাদি জবাই আইন প্রত্যাহার করুন, এটি একটি গোপন এজেন্ডা এবং সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা। অসুস্থ ও বয়স্ক গবাদি পশুর কোনো ক্রেতা নেই। এটা কৃষকদের জন্য ক্ষতি,। আর সরকারে ফিরেই সেই লক্ষ্যেই বড় পদক্ষেপের বার্তা শোনা গিয়েছে কংগ্রেসের গলায়।
তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ও কর্ণাটকের ইনচার্জ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা এই বিল আনার বিপক্ষে।