আসিফ রেজা আনসারী: প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ওঠে আসা। তারপর ডাক্তারি পড়াশোনা। শুধু তাই নয়– তিনি বর্তমানে পোস্ট-ডক্টরেট কার্ডিওলজিস্ট। তাতেও ভুলে যাননি গ্রাম বাংলার দুস্থ মানুষদের। যাঁদের একেবারের অর্থিক অবস্থা ভালো নয়– তাঁদের বিনা টাকাতেই চিকিৎসা করছেন এক ডাক্তারবাবু। নীরবে সেই কাজ করে যাচ্ছেন বিগত কয়েক বছর ধরে। সেই ডাক্তারের নাম সেক মিনহাজউদ্দিন সিরাজ। জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার অন্তর্গত ধনেশ্বপুর গ্রামে। তারপর পাড়ি দিয়েছেন একটা দীর্ঘপথ। মেধা ও আল্লাহর উপর ভরসা তাঁকে একজন সুপরিচিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে। সাফল্য নিয়ে এমনই অভিব্যক্তি তাঁর। সমাজসেবা নিয়ে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য– রোগীদের আর্থিক অবস্থা দেখি– বিবেক বলে পাশে দাঁড়ানো দরকার। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই গরিব রোগীদের কাছে টাকা-পয়সা নিই না।
ডা. মিনহাজউদ্দিন বলেন– আমি রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার আগে তার আর্থিক দিকেও খেয়াল রাখার চেষ্টা করি। বর্তমানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হয়ে যাওয়ার মানুষের সুবিধা হচ্ছে– আগে গরিব মানুষজন খুবই সমস্যায় পড়তেন। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন– আমি গরিব রোগীদের সরকারি হাসপাতালে আসতে বলি– সেখানেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার বন্দোবস্ত হয়।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত আছি। বর্ধমানের কিমস্ অর্থাৎ, কল্যাণী ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স ও বেঙ্গল ফেইথ হাসপাতালের মাধ্যমেও স্বল্প খরচে হার্টের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত আছি।
ডাক্তারবাবু জানান– তিনি ইন্টারভেশনাল ক্যাথাটার বেসড সার্জারি যেমন- অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি– পেসমেকার এগুলি করছেন। কারও হৃদপিণ্ডের ধমনি ব্লক থাকলে তার চিকিৎসা বা ছোট শিশুদের জন্মগতভাবে হার্টে ফুটো থাকলে তার চিকিৎসাও করা হয়।
প্রসঙ্গত– ডা. মিনহাজউদ্দিন সিরাজ-এর আব্বা একজন অবসপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। মা গৃহবধু। তিনি প্রথমে ধনেশ্বপুর চণ্ডী প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর গোপালচন্দ্র শিক্ষা সদন থেকে মাধ্যমিক পাস করেন ২০০২ সালে। বাড়ি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের জলচক নাটেশ্বরী নেতাজি বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। সেই বছরই জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও তা ছেড়ে দেন। পরের বছর রাজ্য জয়েন্টে ৩৮০-র Rank করে এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়া শুরু হয়।
২০১০ সালে এমবিবিএস পাস করেন এক বছর ইন্টার্নশিপ করেন। ২০১২ থেকে ১৫ ব্যাচে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমডি করেন। ২০১৬-১৯-এ কার্ডিওলজিতে ডিএম করেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে। পড়াশোনায় ছোটবেলা থেকেই ভালো ছিলেন ডা. মিনহাজউদ্দিন। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি এমবিবিএস করার সময়ও প্যাথলজিতে ৭৫ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে অনার্স পেয়েছিলেন। বাবার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে হবে। সেই ইচ্ছা পূরণ হওয়ায় খুশি ডা. মিনহাজউদ্দিন। তিনি বলেন– বাবা-মায়ের পাশাপাশি তাঁর দিদিও পড়াশোনার কাজে সাহায্য করেছে।